দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সুখবর নিয়ে উদয় হচ্ছে ভোলার ৪০০ বছরের পুরনো চর কুকরী-মুকরী। যেখানে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সুবিশাল সমাহার। চরকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে অত্যাধুনিক নানা সুযোগ-সুবিধায়। পর্যটকরা চর কুকরী-মুকরীতে এখনই গিয়ে দেখতে পারবেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। উপভোগ করতে পারবেন সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের গর্জন, নির্মল বাতাস, বাহারি ম্যানগ্রোভ বন, সারি সারি গাছ, নারিকেল বাগান আর বালুর ধুম নিয়ে মানবসৃষ্ট অপরূপ প্রকৃতি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রাচীনতম এ জনপদটিকে এরই মধ্যে অনেকটা আধুনিকতায় সাজিয়ে-গুছিয়ে তোলা হয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটক টানতে চলছে নানান প্রকল্পের কাজ। যার মধ্যে রয়েছে আধুনিক পর্যটক ভবন নির্মাণ, সোলারভিত্তিক ২ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপন, বন গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণ ইত্যাদি। প্রায় ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক রেস্ট হাউজ নির্মাণের কাজ এরই মধ্যে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তিনতলা বিশিষ্ট এই রেস্টহাউজে রয়েছে ভিআইপি, ভিভিআইপিসহ ২০টি আবাসিক রুম। রয়েছে সভা, সেমিনার ও ওয়ার্কসপ করার কক্ষ। আরও থাকছে নিজস্ব জেনারেটর ও বিদ্যুৎ এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা। এসব কার্যক্রম এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যার মধ্যে রয়েছে আধুনিক পর্যটক ভবন নির্মাণ ও বনের পাখি হরিণসহ বিভিন্ন প্রাণী দেখার টাওয়ার নির্মাণের কাজ। নির্মাণ কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। গত বুধবার বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, ভোলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকোশলীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা এগুলো দেখে গেছেন। এছাড়া ২ মেঘাওয়াট মিনি পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরির জন্য রহিম আফরোজ সোলার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিপণন বিভাগের প্রধানও ঘুরে গেছেন। বিপণন বিভাগের প্রধান ইশতিয়াক আহম্মেদ জানান, শিগগিরই সোলারভিত্তিক ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হচ্ছে। কুকরী-মুকরী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজেদুল আলম বলেন, ‘চলতি বছরেই পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র চালু হলে টাওয়ার থেকে বনের অতিথি পাখি দেখা যাবে। পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরতে আসা মানুষদের বসার স্থান হিসেবে বেঞ্চ ও ছাতার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, এরই মধ্যে জায়গাটি মানবসৃষ্ট বনে রূপান্তিত হয়েছে। তবে এখানে আরও কিছু প্রাণী আনার প্রক্রিয়া চলছে। কয়েক বছরের মধ্যেই কুকরী-মুকরী সুন্দরবনের মতো পূর্ণতা পাবে। এছাড়াও বনের জীব বৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখতে বাহারি প্রজাতির বৃক্ষ-তরুলতা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে বন গবেষণা কেন্দ্র। বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষা চর কুকরী-মুকরীতে রয়েছে কাঁকড়া, বাইন, কেওয়া, গেওয়াসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজী। এসব গাছের সংখ্যা সরকারি হিসেবে ২ কোটি ৫০ লাখের বেশি। বনে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫০ হাজার হরিণ, বানর, ভাল্লুক, বন মোরগসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদ। হরিণের মিঠা পানির সংকট দূর করতে একটি পুকুর তৈরি করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সাগরের বুক চিরে জেগে উঠেছে বড় বড় বিচ্ছিন্ন সবুজ দ্বীপ। সেখানে রয়েছে লাখ লাখ গাছের সমারোহ। শীত মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির কলতানিতে মুখরিত হয়ে উঠে এসব অঞ্চলের চারপাশ। কুকরীর বালুর ধুম ও নারিকেল বাগান মুগ্ধ করে ভ্রমণপিপাসু মানুষকে। ছোট ছোট খালের দুপাড়ে রয়েছে বৃক্ষের সমারোহ। ফলে নৌকায় ঘুরে প্রাণ জুড়িয়ে যায় বিনোদন প্রিয় মানুষের। এখানে বসেই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। কুকরীতে বর্তমানে বিদ্যুৎ না থাকলেও রাতে কুকরী সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে। কুকরী-মুকরী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজেদুল আলম বলেন, চর পাতিলা, পশ্চিম চর দিঘল, চর দিঘল, চর আলীম, চর জমিনসহ বেশকিছু চর থাকলেও আরও নতুন দুটি চর জেগে উঠছে। সেখানেও বৃক্ষ রোপণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।