আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের গোয়েন্দা বিভাগের সত্যতা প্রতিবেদনের পর বুধবার (২৮ আগস্ট) কমিশন সভায় আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।
গত ৭ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে আব্দুর রহমান ফরিদপুর-১ আসনে নৌকা নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তাকে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে অন্য মন্ত্রী-এমপিদের মতো লাপাত্তা হয়ে যান আব্দুর রহমান। এখন পর্যন্ত তিনি কোথায় আছেন জানা যায়নি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে আগে থেকেই অভিযোগের শেষ ছিল না। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, নারী কেলেঙ্কারি, বেআইনি কার্যকলাপ, সংখ্যালঘুদের জমি দখলসহ ফরিদপুর-১ আসনের মানুষের কাছে বরাবরই এক বিতর্কিত নাম আব্দুর রহমান।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর সেনানি না হয়েও আব্দুর রহমান নিজে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়েছেন। আর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েও বছরের পর বছর সরকারের থেকে ভাতাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। এ নিয়ে তার উপজেলা মধুখালীর বীর মুক্তিযোদ্ধারা নানা সময় ক্ষোভও দেখান।
এ ব্যাপারে মধুখালী উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবিরুল আলম বলেন, ‘আব্দুর রহমান মুক্তিযুদ্ধ করেনি, কোনোভাবেই মুক্তিযোদ্ধা নন। এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা অবৈধভাবে ভাতা নিয়েছে, যা আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক।’
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় আব্দুর রহমান মনোনয়ন বাণিজ্য করে বিপুল অর্থ হাতিয়েছেন। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের শেষ দশ বছরে ফরিদপুর-১ আসনে টিআর, কাবিখা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অটো রাসই মিল, অটো ব্রিকস দখল নিয়ে সেগুলো স্ত্রী-সন্তানের নামে করার অভিযোগও রয়েছে এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে তিনি নিজের দলের নেতাকর্মীদেরও রেহাই দেননি। এছাড়াও স্থানীয় কুখ্যাত ডাকাত-সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশয় দিতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আব্দুর রহমানের দুর্নীতির মধ্যে নিজ নামে ফরিদপুরের মধুপুরে ভবন নির্মাণ, পূর্বাচলসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে জমিক্রয়, নিজ নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসি, দি সিটি ব্যাংক পিএলসি এবং সোনালী ব্যাংক পিএলসিতে বড় অংকের সঞ্চয়পত্র কেনার অভিযোগ রয়েছে। আব্দুর রহমানের স্ত্রী মির্জা নাহিদা হোসেনের নামে রাজধানীর পরিবাগে শান্তা দিগন্ত টাওয়ারসহ ৪টি বহুকোটি দাকা দামের ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়াও আব্দুর রহমান দেশের বাইরে টাকা পাচার করে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন ও কানাডায় একাধিক বাড়ি ক্রয় করেছেন। দুদকের গোয়েন্দা বিভাগ এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় কমিশন প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেজন্য শিগগিরই তদন্ত কমিটি গঠন করবে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত