‘দেশের বৃহত্তর শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান গ্রামীণ অসচ্ছল নারীদের সচ্ছল করা এবং উদ্যোক্তা তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ২০০৫ সালে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ক্ষুদ্র পল্লী ঋণ প্রকল্প চালু করেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তিনটি উপজেলায় ২৬ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
অসচ্ছল পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে এই ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয় উনার জন্মস্থান বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় প্রথম সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত এই ঋণ কর্মসূচি শুরু করেন। এখন কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগর উপজেলায় ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। আপনারা সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন আবার সেই ঋণের টাকা শতভাগ ফিরিয়ে দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন।’ বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ক্ষুদ্রঋণ নিতে আসা উপকারভোগীদের উদ্দেশে কথাগুলো বলছিলেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ময়নাল হোসেন চৌধুরী।
গত ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লার হোমনা পৌরসভার হরিপুর গ্রামে ৭৪তম সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত এই ঋণ বিতরণ করা হয়। এদিন হোমনা উপজেলার ৩৪৬ জন নারীর মধ্যে ৫১ লাখ ৯০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের এফসিএস প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম নাসিমুল হাই, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ডিজিএম মাইমুন কবির, ক্ষুদ্র পল্লী ঋণ প্রকল্পের ডিজিএম মো. মোশাররফ হোসেন, বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক মো. চান মিয়া, কাউন্সিলর জাকির হোসেন প্রমুখ।
এম নাসিমুল হাই বলেন, ‘বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যারা সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ দেওয়ার তিন মাস পর আসল টাকা কিস্তি হিসেবে প্রতি সপ্তাহে শতভাগ আদায় করছে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান সাহেব এই ঋণকে সুদমুক্ত করেছেন। মানবকল্যাণে কাজ করাই তার মূল লক্ষ্য। আপনারা তার জন্য ও তার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন, যাতে আরো অনেক অসচ্ছল ব্যক্তির মাঝে সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারেন।’ অধ্যাপক ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বসুন্ধরা গ্রুপই সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ দিয়ে অসচ্ছল পরিবারের মধ্যে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করছে। এভাবে ঋণ বিতরণ অব্যাহত রাখলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরো অনেক মজবুত হবে। তাহলে দেশে আর অতি দরিদ্র মানুষ থাকবে না।’
দ্বিতীয়বার ঋণগ্রহীতা কয়েকজনের কথা
সাহিদা আক্তার (৩৫), বাঘমারা গ্রাম, হোমনা উপজেলা
‘প্রথম ঋণ নিয়া হাঁস-মুরগি পালন করছি। আমার অনেক লাভ অইছে। এইবারের টেহা (টাকা) দিয়া শুধু রাজহাঁসের বাচ্চা কিনমু। বাড়ির পাশে ঘাসক্ষেত। ঘাস খাইয়া নিজে নিজে বড় হইব। আগের থেইকা বেশি লাভ হইব। খাবারের অভাব থাকত না আর। আল্লাহর কাছে বসুন্ধরার হগলের লাগি দোয়া করি।’
মুর্শিদা আক্তার (৪০), বাঘমারা গ্রাম, হোমনা উপজেলা
‘প্রথমবার পাওয়া টেহা থেইক্কা ১৪ হাজার ৫০০ টেহা নিয়া শুকনাপোকনা একটা গরুর বাছুর কিনছিলাম। আশেপাশের লোকেরা মরা গরু কিনছি বইলা আমারে অনেক পচাইছে। প্রতিদিন দুপুরে গরুরে গোসল করাইতাম, চিরুনি দিয়া উকুন ছাপ (পরিষ্কার) কইরা দিতাম। আস্তে আস্তে গরুটা ভালো তাজা হওয়া শুরু করল। এক বছর পরই আল্লাহর রহমতে গরুডা বাজারে নিয়া এক লাখ টেহা বেচছি। আশেপাশের বেবাকতে (সবাই) অবাক হইয়া রইল, অসুস্থ গরুটারে কিভাবে বাঁচাইয়া এত বড় করলাম। এই সুযোগটা আল্লাহ আমারে কইরা দিছে বসুন্ধরা থেইকা সুদমুক্ত ঋণ পাইছি বইলা। এইবারের টেহা দিয়া ছোট গরুর লগে ছাগলও কিনমু। আমাদের আর কোন টেহার অভাব হইত না। আল্লাহর কাছে বসুন্ধরার মালিকের লাগি খাছ কইরা দোয়া করি।’
মায়া আক্তার (৫০), শ্রীমদ্দি গ্রাম, হোমনা উপজেলা
‘আগেরবার টেহা নিয়া ছাগল কিনছি। ভালো লাভ হইছে। এইবারের টেহা নিয়া হাঁস-মুরগি কিনমু আর মানুষের বর্গাজমি চাষ করমু। লাভ হইব আবার খাবারও ঘরে আইব। আর অভাব থাকত না। বসুন্ধরার হগলের লাগি নামাজ পইড়া দোয়া করমু।’
শাহনাজ বেগম (৪০), হরিপুর গ্রাম, হোমনা উপজেলা
‘এইবার নিয়া আমি দুইবার বসুন্ধরা থেইকা ঋণ পাইলাম। প্রথমবার টেহা নিয়া বাছুর কিনছি। এইবারের টেহা নিয়া কৃষিকাজ করমু। ফসল অইলে খাবারের অভাব থাকত না। সুদ ছাড়া এইভাবে টেহা বসুন্ধরা ছাড়া আমরারে কেহই দেয় নাই। বসুন্ধরার লাগি অন্তর থেইকা দোয়া করি। হেগোরে আল্লাহ ভালো রাখুক, যাতে আমরার মতো গরিব মানুষরে বেশি বেশি সাহাইয্য করতে পারে।’
কুমিল্লার হোমনা পৌরসভার হরিপুর গ্রামে সম্প্রতি বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ৭৪তম সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণ করা হয়। সেদিন হোমনা উপজেলার ৩৪৬ জন নারী এসেছিলেন ঋণ নিতে। কয়েকজন এবারই প্রথম ঋণ নিতে এসেছেন। বেশির ভাগই আগে এক বা দুইবার নিয়েছেন। এই টাকা নিয়ে কতটুকু উপকার হচ্ছে তাদের, কী করতে চান এবারের ঋণ নিয়ে, তা জানতে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন শামীম আল মামুন
চায়ের দোকানে মায়া রাণীর দৈনিক আয় ৮০০ টাকা
‘এই যুগে এমন সাহায্য কেউ করে নারে বাপ। সবাই খালি লাভের ধান্দায় ঘুরে। বসুন্ধরার ঋণের কিস্তি সহজেই পরিশোধ করবার পারি। তারাই আমগোর কাছে আহে কিস্তির টাহা নিতে। ভগবান আপনেগো মঙ্গল করুক।’ বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ক্ষুদ্রঋণ নিতে এসে চোখের পানিতে এভাবেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন মায়া রাণী দাস। কৃষ্ণ কমল দাস ও মায়া রাণী দাসের অসচ্ছল পরিবারে পাঁচ সন্তান। তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে একমাত্র উপার্জনক্ষম বড় ছেলেটি দিনমজুরি করে। বসতভিটা ছাড়া কৃষ্ণ কমল দাসের কোনো কৃষিজমি নেই। অন্যের জমিতে বদলা খেটে আর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বয়সের ভারে আগের মতো কাজ করতে পারেন না। দিশাহারা হয়ে ভাবছিলেন কিভাবে সংসার চালাবেন। এমন পরিস্থিতিতে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। মায়া রাণী দাস এক বছর আগে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নিয়ে একটি চায়ের দোকান দাঁড় করান। এখন প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করেন। গ্রামবাসী বসুন্ধরার এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। চায়ের দোকানের পরিসর বাড়িয়ে আরো মালপত্র ক্রয় করতে চান তিনি। সে জন্য দ্বিতীয়বারের মতো এসেছেন ঋণ নিতে। বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদমুক্ত ঋণে মায়া রাণী দাসের পরিবারে ভাগ্যের চাকা ধীরে ধীরে ভালোর দিকে এগিয়ে চলছে।
শামসুন্নাহারের কষ্টের দিন শেষ হয়েছে
চরেরগাঁও এলাকার শামসুন্নাহার। একসময় অন্যের বাড়িতে চাল ভাঙিয়ে গুঁড়ি তৈরি করে দিতেন। ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে আয় হতো খুব সামান্য। স্বপ্ন দেখতেন একদিন তার কষ্টের দিন শেষ হবে। স্বামীকে নিয়ে সংসারে সচ্ছলতা আনবেন। অনেকের কাছে টাকা ধার চেয়েও পাননি। একদিন জানতে পারলেন বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন থেকে সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণ করা হবে। শামসুন্নাহার আশার আলো দেখতে পেলেন। তিনি প্রথমবারে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চালের গুঁড়ি ভাঙানোর মেশিন কিনলেন। সফলতার সঙ্গে প্রথমবারের ঋণ পরিশোধ করে দ্বিতীয়বারের মতো ঋণ নিতে এসেছেন। এবারের টাকা দিয়ে তিনি ধান ভাঙানোর মেশিন কিনতে চান। শামসুন্নাহার তার কষ্টের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেন, ‘বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ক্ষুদ্রঋণ আমার স্বপ্ন পূরণ করছে। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকের লাইগা দোয়া করি, তিনি যেন আরো গরিব মানুষের উপকার করতে পারেন। আমি চাই এই ঋণ নিয়ে অন্যরা আমার মতোই উন্নতি করুক।’
ধান, বেগুন আর রসুন লাগাইব
৬০ বছর বয়সী কিষানি পরিস্কার নেছা। স্বামী শামসুল হক পৈতৃক সূত্রে অল্প কিছু কৃষিজমি পেয়েছিলেন। সেই জমি আবাদ করে সংসার চালান। পরিস্কার নেছা ঘর-গৃহস্থালির কাজ করেন এবং ছাগল পালেন। তাদের ঘরে চারজন মেয়েসন্তান। সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। টাকার অভাবে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছিল। বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের জন্য ঘুরেছেন, কিন্তু পাননি। স্বামীর এই অবস্থা দেখে পরিস্কার নেছা কম দামে তার ছাগল বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন। বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ক্ষুদ্রঋণের বিষয়ে খোঁজ পেয়ে এসেছেন সহজ শর্তে ঋণ নিতে। এখানে এসে তিনি খুব অবাক হয়েছেন। এভাবেও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দরিদ্র নারীদের নিয়ে ভাবতে পারে, এটা তার বিশ্বাস হয়নি! বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন। ঋণের টাকা হাতে পাওয়ার পর তার বিশ্বাস হয়েছে এটাও সম্ভব। তিনি বলেন ‘ঋণের টাকা নিয়া আমরা জমিতে ধান, বেগুন আর রসুন লাগাইব। এই টাকায় আমাগো কৃষিকাজে খুব উপকার হইব, সারা বছর খাইয়া-পইরা বাঁচতে পারমু। বসুন্ধরা গ্রুপ এত ভালো কাজ করতাছে, নামাজ পইড়া দুই হাত তুইলা তাগো লাইগা দোয়া করমু।’
একটা সেলাই মেশিন কিনুম
‘আমার স্বামী সিএনজি অটোরিকশা চালায়। জমার টেকা বাদ দিয়া সারা দিনে ৬০০-৭০০ টাকা আয় করেন। কোনো কারণে কাজে যাইতে না পারলে বাজার করতে হিমশিম খাইতে অয়। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করছি। তারপর আর পড়তে পারি নাই। তবে সেলাইয়ের কাজ শিখেছি। আমার স্বামীটা ভালা মানুষ। ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা আছে। আমি চাই সংসারটা আরেকটু ভালা কইরা চলুক। যেহেতু সেলাইয়ের কাজ জানি, তাই এইহানে আইছি ঋণ নিতে। একটা সেলাই মেশিন কিনুম।’ বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ক্ষুদ্রঋণ হাতে পেয়ে দেড় বছরের শিশুপুত্র কোলে নিয়ে এভাবেই বলছিলেন তানিয়া সুলতানা। তিনি আরো বলেন, ‘সুদমুক্ত, সার্ভিস চার্জ বিহীন ঋণ, সহজ কিস্তি পরিশোধের ব্যবস্থা আর কোথাও নাই। বসুন্ধরা গ্রুপ মহৎ কাজ করতাছে। হেগো দেইখা সবারই শিক্ষণীয় আছে। বসুন্ধরার মালিক মহান হৃদয়ের মানুষ। উনার লাইগা দোয়া করি।’
খোরশেদা বেগম এখন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী
একসময় অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন খোরশেদা বেগম। স্বামী রুপ মিয়া কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন বিনা সুদে ঋণ দেয় শুনে দুই বছর আগে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কাঁচামালের ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে ব্যবসার মূলধন বাড়ান। তিন মাস পর সংসার চালিয়ে তার মূলধন দাঁড়ায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। হোমনা চরেরগাঁও গ্রামের খোরশেদা বেগম বলেন, ‘বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন থেকে প্রথমবার ঋণ নিয়ে কাঁচামালের ব্যবসা করেছি। ছেলেমেয়েদের নিয়ে সংসার ভালোই চলছে। প্রথম তিন মাস কিস্তি দিতে হয় না। তাই ক্ষুদ্র ব্যবসা করে পুঁজি বাড়ে আবার সংসারও সুন্দরমতো চলে। তিন মাস পর ৩০০ টাকা করে প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে গায়ে লাগে না। আগে অনেক দুঃখে-কষ্টে চলতে হতো। এখন ব্যবসা করে সুন্দরভাবে সংসার চলছে। বসুন্ধরার মালিকের জন্য অনেক দোয়া করি আল্লাহপাক যেন তাকে ও তার পরিবারের সবাইকে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখেন।
শ্রমিক থেকে মাছ ব্যবসায়ী মায়া রাণী
হোমনা উপজেলার বাঘমাড়া গ্রামের মায়া রাণী দাসের স্বামী কমল দাস অন্যের নৌকা আর জাল দিয়ে মাছ ধরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। দুই ছেলে-মেয়েসহ চার সদস্যের পরিবার কোনোমতে চলত। জালে মাছ ধরা পড়লে চুলায় আগুন জ্বলত, না হয় রুটি খেয়ে দিন পার হতো। পাশের গ্রামের শিউলী রানীর কাছ থেকে জানতে পারেন বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন বিনা সুদে ঋণ দেয়। মায়া রাণী গিয়ে হাজির হন হোমনা বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ক্ষুদ্র পল্লী ঋণ অফিসে। ২০২৩ সালে প্রথম ঋণ নিয়ে মায়া রাণী তার স্বামী কমল দাসকে ১৫ হাজার টাকা দেন। সেই টাকা দিয়ে জেলেদের কাছ মাছ কিনে বাজারে বিক্রি শুরু করেন। তিন মাস সেই টাকা দিয়ে প্রতিদিন বিক্রি করে সংসার চালিয়ে ৩৫ হাজার টাকা পুঁজি হয় তাদের। সংসার চালিয়ে প্রতি সপ্তাহে ৩০০ টাকা ঋণ পরিশোধ করতে তেমন বেগ পেতে হয় না। মায়া রাণী বলেন, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের মালিককে যেন ভগবান আরো হায়াত দেন।
হাঁস-মুরগির খামার করবেন শাবনূর
হোমনা পৌরসভার বাঘমারা গ্রামের গৃহবধূ শাবনূর আক্তার। স্বামী আদম আলী অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে চারজনের সংসার। ছেলে-মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। স্বামী আদম আলীর রোজগারের ওপর চলতে খুব কষ্ট হয়। শাবনূর স্বপ্ন দেখতেন নিজে কিছু করে স্বামীকে ও বাচ্চাদের পড়াশোনায় সহযোগিতা করবেন। বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে হাঁসের বাচ্চা আর পাঁচ হাজার টাকায় ডিম দেওয়ার মুরগি কেনেন শাবনূর। তিন মাস লালন-পালন করার পরই মুরগি ডিম দেওয়া শুরু করে। মুরগি ও হাঁসের ডিম বিক্রি করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করে যে টাকা রয়েছে, তা দিয়ে দুটি ছাগলের বাচ্চা কিনে পালন করেছেন। শাবনূর আক্তার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। দ্বিতীয়বারের মতো ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে হাঁস ও মুরগির খামার করতে চান তিনি।