দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে, ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট, যুক্তরাষ্ট্র জাপানের নাগাসাকি শহরের উপর দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। এর তিন দিন আগে, হিরোশিমাও একই ধ্বংসাত্মক হামলার শিকার হয়েছিল। এই দু'টি হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়, এবং বছরের মধ্যেই সেই সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে যায়।
তেজস্ক্রিয় বিকিরণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের কারণে অসংখ্য মানুষ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে ছিলেন। এমনই কিছু বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি, যারা জাপানে 'হিবাকুশা' নামে পরিচিত। তাদের জীবন ছিল এক দীর্ঘ দুর্ভোগের প্রতিচ্ছবি।
হিবাকুশাদের মধ্যে এক ইচিরো মিসে, যিনি বোমা হামলার সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি ছিল বোমার কেন্দ্রস্থল থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে। বোমা হামলার পর স্কুলে ফিরে গিয়ে তিনি যে বিভীষিকা দেখেছিলেন, তা আজও তার মনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। তিনি দেখেছিলেন আহত মানুষদের যন্ত্রণা, যারা মৃত্যুর প্রার্থনা করছিলেন। তার সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আজও তাকে তাড়া করে বেড়ায়।
ইচিরো মিসে এখনও বেঁচে আছেন এবং বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করার জন্য কাজ করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, বর্তমান বিশ্ব আরও বড় একটি সংকটের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে, যা হিরোশিমা-নাগাসাকির চেয়েও বেশি ধ্বংসাত্মক হতে পারে। তার মতো হিবাকুশারা আমাদের বিবেক জাগ্রত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তাদের সেই প্রচেষ্টা আজও পুরোপুরি সফল হয়নি।
নাগাসাকির মেয়র সুজুকি শিরো চলতি বছর ৯ আগস্ট নাগাসাকি বোমা হামলার বার্ষিকী উপলক্ষে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে জি-সেভেনের ছয়টি দেশের রাষ্ট্রদূতেরা সেই স্মারক অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেন। তারা শুধু অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকেননি, বরং নাগাসাকির মেয়রের মানবিক অবস্থানকেও অবজ্ঞা করেছেন। এতে করে প্রমাণিত হয়, আজকের বিশ্বে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত করার জন্য হিবাকুশাদের নিরলস প্রচেষ্টা কতটা অবমূল্যায়িত হচ্ছে।
তবু ইচিরো মিসের মতো ব্যক্তিদের প্রচেষ্টা থামেনি। তাদের এই লড়াই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানবতার জন্য পারমাণবিক অস্ত্রের বিপদ কতটা মারাত্মক হতে পারে। যদি আমরা তাদের এই সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করি, তবে আমাদের ভবিষ্যত হবে আরও বেশি অনিশ্চিত এবং বিপর্যয়কর।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল