আজ থেকে ২০০ বছর আগে জন্ম নিয়েছিলেন মারিয়া মিশেল। এই মহিলা গোটা যুক্তরাষ্ট্রে সাড়া ফেলে দেন। মার্কিন ইতিহাসে তিনি একজন পেশাদার নারী জ্যোতির্বিদ ছিলেন। ১৮৪৭ সালে তিনি নতুন ধূমকেতু আবিষ্কার করেন যা ‘মিস মিশেলের ধূমকেতু’ নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়—
মারিয়া মিশেলের জীবনের গল্পটা করুণ। বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি পান এবং সেই মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। তার গল্পের গতি যেন ভেনাস গ্রহের মতোই! পেছনের দিকে নিয়ে যায়। মারিয়া যখন ছোট, তখন নারীর বিজ্ঞানচর্চা ছিল স্বাভাবিক। তবে এই চর্চাকে পেশাদারিত্বে রূপ দেওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। আর হ্যাঁ, সে সময় ছিল না কোনো লিঙ্গ বৈষম্য। একদমই ছিল না। বিভিন্ন কারণে আঠারো শতকের শুরুর দিকে মহাকাশ পর্যবেক্ষণে নারীদের উৎসাহিত করা হতো। মহাকাশ পর্যবেক্ষণকে বলা হতো সুইপিং দ্য স্কাই।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং শিক্ষাবিদ মারিয়া মিশেল ১৮১৮ সালের ১ আগস্ট ম্যাসাচুসেটসের নান্টউইটে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন নান্টউইটের একটি বিদ্যালয়ে। জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে অধ্যয়নের আগ্রহ জন্মে বাবা উইলিয়ামের সমর্থনে। মিশেলকে দুরবিনের ব্যবহার সম্পর্কে হাতেখড়ি শিক্ষা দেন বাবা উইলিয়াম। মা লিডিয়া মিশেল ছিলেন সাধারণ মহিলা। তাদের পরিবারকে বলা হতো কোয়াকার পরিবার। বাবা উইলিয়াম ও মা লিডিয়ার পরিবারে ছিল ৯ জন ছেলে-মেয়ে। তারা বিশ্বাস করত ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই শিক্ষার প্রয়োজন আছে এবং উভয়কেই স্কুলে যেতে হবে। মিশেলের বাবা ছিলেন একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং শিক্ষক।
 ১৮৩৬ থেকে ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত মিশেল নান্টউইটের এথেনাম লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কাজ করেন। রাতের অন্ধকার পেরিয়ে সকাল হলেই তিনি সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। সৌরগ্রহণ, তারকা, বৃহস্পতি ও শনি সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান আহরণের জন্য বিভিন্ন বই পড়তেন। তার বয়স যখন ১২, তখন তিনি সর্বপ্রথম বাবার সঙ্গে সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। আকাশ পর্যবেক্ষণের গুণাবলিগুলো মারিয়া মিশেল সযত্নে লালন করেছিলেন। মারিয়া ছিলেন তৎকালীন পেশাদার নারী জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে সেরা। মিশেল আকাশের নক্ষত্রগুলোর একটি নকশা তৈরি করেছিলেন। উনিশ শতকে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় পুরস্কৃতও হন। যা কিনা তার নারী শিক্ষার্থীদের সামনে বিজ্ঞানের দুয়ার খুলে দেয়। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার সংগ্রাম আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সে সময়ে নারী অগ্রগতির পথ সহজ এবং সুগম ছিল না। কারণ যখনই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনই তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখনকার সময়ের সামাজিক এবং আর্থিক প্রেক্ষাপট।
১৮৩৬ থেকে ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত মিশেল নান্টউইটের এথেনাম লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কাজ করেন। রাতের অন্ধকার পেরিয়ে সকাল হলেই তিনি সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। সৌরগ্রহণ, তারকা, বৃহস্পতি ও শনি সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান আহরণের জন্য বিভিন্ন বই পড়তেন। তার বয়স যখন ১২, তখন তিনি সর্বপ্রথম বাবার সঙ্গে সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। আকাশ পর্যবেক্ষণের গুণাবলিগুলো মারিয়া মিশেল সযত্নে লালন করেছিলেন। মারিয়া ছিলেন তৎকালীন পেশাদার নারী জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে সেরা। মিশেল আকাশের নক্ষত্রগুলোর একটি নকশা তৈরি করেছিলেন। উনিশ শতকে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় পুরস্কৃতও হন। যা কিনা তার নারী শিক্ষার্থীদের সামনে বিজ্ঞানের দুয়ার খুলে দেয়। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার সংগ্রাম আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সে সময়ে নারী অগ্রগতির পথ সহজ এবং সুগম ছিল না। কারণ যখনই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনই তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখনকার সময়ের সামাজিক এবং আর্থিক প্রেক্ষাপট।
ইতিহাসবিদের মতে, তৎকালীন সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানে নারীদের প্রবেশ তেমন কঠিন কিছু ছিল না। সময়টিকে নারীসুলভ বিজ্ঞানের সময় বলা হতো। যেন মহাকাশ ও নক্ষত্র নিয়ে গবেষণায় পুরুষের চাইতে নারীরাই অপেক্ষাকৃত বেশি এগিয়ে ছিল। ‘মারিয়া মিশেল অ্যান্ড দ্য সেক্সটিং অফ সায়েন্স’ বইটির লেখক, সাইমন্স কলেজের প্রফেসর রিনি বার্গল্যান্ড তার বইতে উল্লেখ করেন, ‘উনিশ শতকের শুরুতে আমেরিকার বিজ্ঞানচর্চায় নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে অংশগ্রহণ করত। বিজ্ঞানচর্চায় নারীদের মতো পুরুষরা অংশ নিত না। তখন বিজ্ঞানচর্চাকে নারীসুলভ রেওয়াজ-রীতিও মনে করা হতো।’
বাবার সাহচর্য এবং নিজের আগ্রহের ফলে, জ্যোতির্বিজ্ঞানে মারিয়া মিশেলের প্রবেশ এবং বিচরণ বেশ সহজেই ত্বরান্বিত হয়েছিল। ১৮৪৭ সালে, পৃথিবী থেকে বহু দূরে অবস্থিত একটি ধূমকেতুর বিবরণ লিপিবদ্ধ করার জন্য সুইডেনের যুবরাজ মিশেলকে মেডেল প্রদান করে পুরস্কৃত করেছিলেন। তখন থেকেই ধূমকেতুটি ‘মিস মিশেলের ধূমকেতু’ নামে পরিচিতি পায়। এর পরের বছরই আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের সর্বপ্রথম নারী জ্যোতির্বিদ নির্বাচিত হন। এরপর যুক্ত হন আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্সের সঙ্গে। ১৮৫৬ সালে চল যান ইতালি। উদ্দেশ্য ভ্যাটিকান অবজারভেটরি থেকে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ। অবজারভেটরি মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হলেও সেখানে নারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এরপর তিনি পিটিশন দাখিল করেন। তার আত্মজীবনীমূলক লেখায় মিশেল বলেন, ‘সন্ন্যাস আশ্রমে থাকার ব্যাপারে আগ্রহ না থাকলেও, নিষেধাজ্ঞা থাকায় মনে জিদ চেপে বসে। দুই সপ্তাহ পর অবজারভেটরির কর্তারা তাকে ভেতরে প্রবেশাধিকার দেন। ১৯৫৪ সালের ২ মার্চ আরেক জার্নালে তার সুইপিং দ্য স্কাই সম্পর্কে জানা যায়, ‘গত রাতে তিন মেয়াদে প্রায় দুই ঘণ্টা যাবৎ ‘স্কাই সুইপ’ করেছিলাম। এটা খুব অসাধারণ একটি রাত ছিল— মেঘমুক্ত, পরিষ্কার এবং সুন্দর একটা আকাশ। আমার কাজ করতে বেশ ভালোই লাগছিল কিন্তু শীতল বাতাসে হঠাৎ আমার পিঠব্যথা করতে শুরু করে। তখন দুটি নেবুলা দেখতে পেয়েছিলাম যা আমার পিঠ ব্যথার কষ্টকে ভুলিয়ে দিয়েছিল।’
ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের সূত্র মতে, যারা জ্যোতির্বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন তাদের মধ্যে শতকরা ২৬ ভাগ হচ্ছেন নারী এবং আমেরিকার জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রফেসরদের মধ্যে চার ভাগের একভাগই নারী। জ্যোতির্বিজ্ঞানে এই মহীয়সী নারীর এত অবদান থাকলেও ১৮৭০ সালের শুরুতে মেয়েদের বিজ্ঞানচর্চার সুযোগ সুবিধা বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। তবুও বিজ্ঞানচর্চা যখন পেশাদারিত্বে রূপান্তর হয় তখন থেকেই বিজ্ঞানচর্চায় নারীদের পথ আরও সংকীর্ণ হয়ে উঠতে থাকে। বিজ্ঞানমনস্ক নারীদের বিজ্ঞানচর্চার দুয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়া দেখে মিশেল বসে ছিলেন না। ১৮৭২ সালে তিনি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য এডভান্সমেন্ট অফ উইমেন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৯ সালে মৃত্যুর এক বছর আগ পর্যন্ত নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করে যান। ১৯৩৭ সালে তার সম্মানে একটি গ্রহাণুর (১৪৫৫ মিশেলা) নামকরণ করা হয়। ২০১৩ সালে গুগল মিশেলের ১৯৫তম জন্মদিনে তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে একটি ডুডল প্রকাশ করে।
 
                         
                                     
                                                             
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        