টাঙ্গাইলে এ বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি পাট মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কিষান-কিষানিরা। অন্য বছরের তুলনায় এবার পাটের বাম্পার ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দাম ভালো পাওয়ায় জেলায় প্রতিবছরই বাড়ছে সোনালি আঁশ চাষ। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৫২ হাজার ৫৫৮ বেল উৎপাদন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৯০ বেল পাট উৎপাদন হবে। চলতি বছরের পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। চলতি বছর জেলায় ৬ হাজার ২০০ জন কৃষককে ১ কেজি করে পাটের বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। জেলার ১২টি উপজেলায় পাটের আবাদ করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্ষার পানি ও ভারী বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন জলাশয়ে পানি জমে আছে। সেই পানিতেই এখন চাষিরা পাট কেটে নদী, নালা, খাল, বিল ও ডোবায় পাট জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং হাটে-বাজারে তা বিক্রিসহ এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে পাট থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজ করতে। কেউবা পাটশোলার আঁটি বেঁধে রোদে শুকাচ্ছেন। কেউ আবার পাট ভাঁজ করে রোদে মেলে দিচ্ছেন। পাট ও পাটশোলার বাজার দরও ভালো। মণপ্রতি সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাটের আঁশ বিক্রি করে যেমন কৃষক টাকা পায় তেমনি পাটের কাঠি জ্বালানি হিসেবে, ঘরের বেড়া দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। ধীরে ধীরে আবার সোনালি আঁশের রাজত্ব ফিরে আসছে এ জেলাতে।
পাট চাষিরা জানান, দেশি, তোষা, কেনাফ, রবি-১ ও ভারতীয় বঙ্গবীর জাতের পাট সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়। পাট অফিস ও কৃষি অফিস থেকে প্রায় প্রতিবছর পাটের বীজ ও সার বিনামূল্যে দেওয়া হয় কিন্তু এই বীজগুলো সময়মতো আমাদের কাছে পৌঁছায় না। এতে পাটের আবাদ ব্যাহত হয়। সময়মতো পাট বীজ হাতে পেলে আবাদ অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
সদর উপজেলার অয়নাপুর গ্রামের কৃষক আয়নাল হক বলেন, এ বছর ৪ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি। প্রতি বিঘায় সাত মণ ফলন হয়েছে। ৪ বিঘা জমির পাট ৩৪০০ টাকা মণ হারে বিক্রি করে ৯৫ হাজার টাকা পেয়েছি। উৎপাদন খরচ ৪০ হাজার টাকা বাদে আমার ৫৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।