মুঘল আমলের প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের পুরনো নয়াবাদ মসজিদ। এটি এখন পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়েছে। বিশেষ করে রাতের আঁধারে আলোক রশ্মি যেন স্থাপনাটিকে নতুন যৌবন দিয়েছে। সম্প্রতি সংস্কারের পর মুসলিম স্থাপত্যের দর্শনীয় প্রাচীন এ মসজিদটি হয়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য। দূরদূরান্ত থেকে প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন, ঐতিহাসিক এ মসজিদটি দেখতে আসছেন পর্যটকরা। শুক্রবারের জুমার নামাজে থাকে উপচে পড়া ভিড়। মসজিদের প্রবেশ পথ পাকা রাস্তা নির্মাণসহ অবকাঠামোয় প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়েছে।
দিনাজপুর তথা উত্তরবঙ্গের পর্যটনে এটি অপার সম্ভাবনার দ্বার।
দিনাজপুর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এবং কাহারোল সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে ঢেপা নদীর পশ্চিম তীরে নয়াবাদ গ্রামে অবস্থিত টেরাকোটার তৈরি নিদর্শন এ নয়াবাদ মসজিদ। কাহারোলের রামচন্দ্রপুর ইউপির নয়াবাদ গ্রামে হওয়ায় মসজিদটির নামকরণ হয় ‘নয়াবাদ মসজিদ’। ১.১৫ বিঘা জমির ওপর নির্মিত ৩টি দরজা ও ২টি জানালা নিয়ে ৩ গম্বুজ ও ৪ মিনার বিশিষ্ট প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যের দর্শনীয় স্থাপনা। বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক মসজিদটি সংস্কার করা রয়েছে। মসজিদের সামনে একটি মাদরাসা হয়েছে। মসজিদের প্রবেশদ্বারের ওপর ফারসি ভাষায় স্থাপিত ফলক হতে জানা যায়, এটি সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সময় ২ জ্যৈষ্ঠ, ১২০০ বাংলা সনে (১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ) মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। জনশ্রুতি অনুযায়ী আঠারো শতকের মধ্যভাগে যখন কান্তজীউ মন্দির নির্মিত হয় তখন পশ্চিমা দেশ থেকে আগত মুসলিম স্থাপত্যকর্মীরা পার্শ্ববর্তী নয়াবাদ গ্রামে মোকাম তৈরি করেন এবং সেখানে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। তিন গম্বুজবিশিষ্ট আয়তাকার মসজিদটির চার কোনায় রয়েছে চারটি অষ্টভুজাকৃতির টাওয়ার। বাইরের দিক থেকে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১২.৪৫ মিটার এবং প্রস্থ ৫.৫ মিটার। দেয়ালের প্রশস্ততা ১.১০ মিটার। মসজিদে প্রবেশে পূর্বদিকে রয়েছে তিনটি খিলান। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে দুটি জানালা। মসজিদের ভিতরে পশ্চিম দিকে রয়েছে তিনটি মিহরাব। দুই পাশের মিহরাব দুটি অপেক্ষাকৃত ছোট। তিনটি অর্ধগোলাকৃতির গম্বুজের মধ্যে মাঝেরটি অন্য দুটির তুলনায় কিছুটা বড়। চার কোণের কর্নার টাওয়ারের মধ্যে ২টির ওপর কুপলা রয়েছে। বাকি দুটির ওপরে ছোট গম্বুজ। দেয়ালজুড়ে আয়তাকার বহু পোড়ামাটির ফলক এবং ফলকগুলোর মধ্যে লতাপাতা ও ফুলের নকশা ছিল। এ রকম ১০৪টি আয়তাকার ফলক রয়েছে। তবে ফলকের মধ্যে অলংকরণের অনেকটাই প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। পোড়ামাটির নকশাগুলো বহু জায়গায় খুলে পড়েছে। সবই সংস্কার করা হয়েছে। নয়াবাদ মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা জাহিদ হাসান জানান, মসজিদটি যে কোনো সময় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট বিভাগ সংস্কার কাজ করে এর দৃষ্টিনন্দন অবয়ব ফিরিয়ে এনেছে।