শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

এবার আসছে টেলিপ্যাথি মেইল

সাইফ ইমন

এবার আসছে টেলিপ্যাথি মেইল

টেলিপ্যাথি বা অতীন্দ্রিয় উপলব্ধি বলতে মনের বিশেষ ক্ষমতা বুঝানো হয়। হাজার হাজার বছর ধরেই মানুষ টেলিপ্যাথি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। টেলিপ্যাথিতে শারীরিক কার্যকলাপের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। এই অতীন্দ্রিয় উপলব্ধির ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যাকে অনেকেই তৃতীয় নয়নও বলে থাকে। বিজ্ঞানীরাও এ বিষয়ে গবেষণা করে আসছেন অনেক দিন ধরে। মানুষের মস্তিষ্কের কর্মপ্রণালি খুবই বিচিত্র। একবার এক ব্যক্তি মাথায় আঘাত পাওয়ার পর যখন সুস্থ হন তখন নিজের মধ্যে অদ্ভুত সব পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তিনি দৃশ্যমান জগতের সবকিছুই গাণিতিক প্যাটার্নে দেখতে পেতেন। এরকম আরও অদ্ভুত ঘটনা ঘটে আসছে মানব ইতিহাসে। কিছুদিন আগে বার্সেলোনার স্টারল্যাবের সিইও তথা ব্রেন টু ব্রেন কমিউনিকেশন প্রজেক্টের শীর্ষকর্তা জুলিয়ো রুফিনির দাবি, প্রথম তারা এই গবেষণায় সফলতার দেখা পেয়েছেন। তার দাবি, তিনি দুই ব্যক্তির ওপর গবেষণার সফল প্রয়োগ করেছেন। কেরলের এক ব্যক্তির মস্তিষ্ক নাকি কম্পিউটারের মাধ্যমে যোজন দূরের এক ব্যক্তির মগজের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। একে অন্যকে কোনো বার্তা দিতে হলে শুধু ভাবলেই চলবে। এতেই পৌঁছে যাবে খবর। অর্থাৎ এখন আপনার মাথায় কী ভাবনা চলছে, তা বুঝে ফেলবেন অন্য কেউ। বিজ্ঞানীর পরিভাষায় মস্তিষ্ক থেকে মস্তিষ্কে সংযোগ স্থাপনই কাজ করবে মেইলের মতো। ফলে একে অনেকেই বলছেন টেলিপ্যাথি মেইল। মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটার যুক্ত করে ওই ব্যক্তিকে কল্পনা করতে বলা হলে তিনি তার হাত অথবা পা নাড়াচ্ছেন। যখন তিনি পা নাড়ানোর কথা ভাবছেন, তখন সেটাকে শূন্য হিসেবে লিখে নেয় কম্পিউটার। আর যখন হাত নাড়ার কথা ভাবেন তখন সেটাকে ১ হিসেবে লিখে নেয়। এভাবে বারবার করার মাধ্যমে সেই বার্তা পাঠানো হয় ফ্রান্সে বসে থাকা এক ব্যক্তির ওপর। মস্তিষ্ক থেকে মস্তিষ্কের এই সংযোগে রিসিভারের কাজ করেছেন তিনি। একটি রোবটের মাধ্যমে ফ্রান্সে থাকা সেই রিসিভারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। সেই রোবট রিসিভারের মস্তিষ্কে খুব সামান্য পরিমাণে ইলেকট্রিকের শক দেওয়া হয়। যিনি বার্তা পাঠাচ্ছেন তিনি যদি হাত নাড়ার কথা ভাবেন, তাহলে রোবটের মাধ্যমে রিসিভার দেখে, তার মাথায় আলো জ্বলে উঠছে। চোখ বন্ধ থাকলেও তার এই অনুভূতি হয়। আর যখন কেরলের ব্যক্তি পা নাড়ানোর কথা ভাবেন, তখন ফ্রান্সের রিসিভারের মাথায় কোনো আলো জ্বলার অনুভূতি হবে না। এই গোটা প্রক্রিয়া যতটা সহজ মনে হচ্ছে আসলে তা নয়। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন যিনি বার্তা পাঠাচ্ছেন তার মাথায় অন্য কোনো চিন্তা এসে গেলে এই গোটা প্রক্রিয়াটাই মাটি হয়ে যায়। ঘটনা হচ্ছে আমাদের চিন্তা ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই। অবচেতন মন নিয়ন্ত্রণ করছে আমাদের চিন্তা ক্ষমতা। এখন প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে যে, এই অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করছে কে! যেই করুক মানুষের চিন্তা ক্ষমতা মানুষকে করেছে অনন্য। সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে, মানুষ চিন্তা করা ব্যতীত এক মুহূর্তও অতিক্রম করতে পারে না তার সমগ্র জীবনে। সব সময় কিছু না কিছু তার মানুষের মাথায় চলতেই থাকে। এটি একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া; চলছে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। চেতন মন পরিচালিত হচ্ছে অবচেতন মন দ্বারা। তাই টেলিপ্যাথি গবেষণা পরিচালনা করার জন্য ওই কেরলের ব্যক্তিকে রীতিমতো ভাবনা স্থির রাখার অনুশীলন চালাতে হয়েছে। এর আগেও মস্তিষ্ক থেকে মস্তিষ্কের সংযোগ স্থাপনের খবর প্রকাশ্যে এসেছে। বছরখানেক আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিশেষজ্ঞ দাবি করেছিলেন, একটি মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে একটি ইঁদুরের লেজের মধ্যে তারা সংযোগ স্থাপন করেছেন। ব্যক্তিটি যে রকম ভাববেন, তার ভিত্তিতেই ইঁদুরের লেজটিতে নড়াচড়া লক্ষ্য করা যাবে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়েও মস্তিষ্ক থেকে মস্তিষ্কে সংযোগ স্থাপনের ওপর গবেষণা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর