১ নভেম্বর, ২০২০ ১০:০২

ইন্দিরা গান্ধী পাশে না থাকলে নয় মাসে যুদ্ধ জয় অসম্ভব ছিল: হানিফ

অনলাইন ডেস্ক

ইন্দিরা গান্ধী পাশে না থাকলে নয় মাসে যুদ্ধ জয় অসম্ভব ছিল: হানিফ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, ইন্দিরা গান্ধী পাশে না থাকলে নয় মাসে যুদ্ধ জয় অসম্ভব ছিল। তিনি শুধু এক কোটি বাংলাদেশিকে আশ্রয় ও খাওয়া-পরার ব্যবস্থাই করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেন। আর বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়েছেন। এমনকি মার্কিন রক্তচক্ষুর বিপরীতে এক অনন্য অবস্থানও নেন তিনি। 

শনিবার রাত ৮টায় জাগরণ টিভি ও বিবার্তা আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। ইন্দিরা গান্ধীর ৩৬তম প্রয়াণ দিবসের স্মরণ ও শ্রদ্ধা উপলক্ষ্যে জাগরণ টিভি- বিবার্তা সংলাপ শিরোনামের ওই ভার্চুয়াল আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন গৌরব ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন। 

হানিফ আরেও বলেন, ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক শিক্ষা শুরু হয় তাঁর পিতা জওহরলাল নেহেরু হাত ধরেই। তিনি বাবার পাশে থেকেই কীভাবে দেশ পরিচালনা করতে হয়, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হয় সেটা শিখেছিলেন। সেটার প্রতিফলন আমরা নেহেরুর মৃত্যুর পরে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দেখতে পাই। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সরাসরি সমর্থন ও সহায়তা ছিল। তিনি প্রণব মুখার্জীর নেতৃত্বে ইন্টার পার্লামেন্টারি কমিটি করে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তুলেছিলেন।

তিনি বলেন, ২৫ মার্চের পরে লাখ লাখ অসহায় মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে ছুটে যাচ্ছিলো এবং ইন্দিরা গান্ধী সেসময় বাঙালিদের জন্য মানবতার দ্বার খুলে দিয়েছিলেন। সেসময় ভারতও অর্থনৈতিকভাবে তেমন শক্তিশালী ছিল না, তবুও আমাদের দেড় কোটি মানুষকে তারা ঠাঁই দিয়েছিলো। এমন মহৎ আচরণ কবে কোন দেশ দেখিয়েছে আমার জানা নাই, তবে ইন্দিরা সরকার আমাদের প্রতি এতটাই আন্তরিক ছিলেন। আমাদের সহায়তা করার জন্য ভারত সরকার ও তাঁর জনগণকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত অতিরিক্ত সারচার্জ, ট্যাক্স দিতে হয়েছে, যা সম্ভব হয়েছে শুধু শ্রীমতী গান্ধীর জন্য। উনার সহায়তা না থাকলে কোনোভাবেই আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে জয় করতে পারতাম না। উনার তুলনা উনি নিজেই। আমার মনে হয়, উনি উপমহাদেশের আয়রণ লেডি। 

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ব্যাপারে দুটি চিরন্তন সত্য আছে, যার একটি, বঙ্গবন্ধু না থাকলে যেমন বাংলাদেশ স্বাধীন হত না, তেমনি ইন্দিরা গান্ধী তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী না থাকলে নয় মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্ভব ছিল না। আরো অনেক বেশি সময় লাগত, আরো অনেক বেশি রক্ত ঝরত। এই ঋণ, এই কৃতজ্ঞতা আমরা কোনোদিন বলে শোধ করতে পারব না। 

তিনি বলেন, আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি নই, বঙ্গবন্ধুর তৈরি করা ইন্দিরা মঞ্চ খুনি জিয়া ক্ষমতায় আসার পরপরই ভেঙ্গে দিয়েছিলো। আমি তার এই কাজের চরম ধিক্কার জানাই। তবে আজকের দিনের বড় খবর হচ্ছে সেই রেসকোর্স ময়দানে একই সাথে মুজিব মঞ্চ, ইন্দিরা মঞ্চ হবে। 

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইন্দিরা গান্ধীর কথা বারবার মনে করিয়ে দেবার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নাম ইন্দিরা গান্ধীর নামে করা উচিত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অন্তর্জাতিক জনমত আদায় করার জন্য তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। 

রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক স্বদেশ রায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর অবদান প্রতিটি বিন্দুতে বিন্দুতে। ১৯৭৫ সালে যেমন ১৫ আগস্ট ঘটেছে, ১৯৭১ সালেও তেমন একটি ১৫ আগস্ট ঘটতে পারত। ইয়াহিয়া খান চেয়েছিলো মাত্র ২০ দিনে মার্শাল কোর্টে বঙ্গবন্ধুর বিচার করে ফাঁসি দিয়ে দেয়া। কিন্তু ইন্দিরা তাঁর কূটনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে সেটা রুখে দিতে পেরেছিলেন, ভারতের পার্লামেন্টে তিনি এটার নিন্দা করেন। ফলে পাকিস্তান তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। ভারতীয় জনগণ যে বঙ্গবন্ধুকে অকুণ্ঠ ভালবাসা দেখিয়েছে, সেটার পিছনেও ইন্ধিরা গান্ধীর কৃতিত্ব ছিল। তিনি প্রায় শতাধিক দেশের কাছে চিঠি লিখেন বাংলাদেশের পক্ষে, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে। ৭৫ এর পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে ইন্দিরা গান্ধী রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিলেন।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর