৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৮:২৮

মৌলভীবাজারে টমেটোর বাম্পার ফলন

সৈয়দ বয়তুল, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারে টমেটোর বাম্পার ফলন

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় অসময়ের গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে সাবলম্বী হচ্ছেন অনেক কৃষক। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছরও বাম্পার ফলন হয়েছে বর্ষাকালীন এই টমেটোর। বাম্পার ফলনে খুশি চাষিরা।

সম্প্রতি উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা-বাগানের ক্লাব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠভরা টমেটো খেত। গাছে গাছে ঝুলে আছে কাঁচা-পাকা টমেটো। কিছু গাছে ফুল ফুটছে। শুধু এই খেতে নয়, কমলগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় এখন এমন চিত্র দেখা যায়। চা-বাগান এলাকার এই মাঠের কাছে কৃষকরা জমি ইজারা নিয়ে টমেটোর চাষ করেছেন। এদের বাড়ি চাষের জায়গা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে। বিভিন্ন বছর তারা বিভিন্ন স্থানে জমি ইজারা নিয়ে টমেটোর চাষ করেন। এরই মধ্যে পাকা টমেটো বিক্রি চলছে। টমেটো খেতে চা- বাগানের অনেক নারী শ্রমিক কাজ করছেন। চাষিরা জানান, পাত্রখোলা ক্লাব এলাকায় উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কয়েকজন চাষি আলাদাভাবে প্রায় ১০০ কিয়ার (বিঘা) জমি এক বছরের জন্য লিজ নিয়ে টমেটোর চাষ করেছেন। প্রতি কিয়ার জমি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন তারা। মো. আবদুল মতিন কয়েক বছর ধরে এখানে তরমুজ, শসা ও টমেটোর চাষ করছেন। এবার তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে টমেটোর চাষ করেছেন। এক বিঘা জমিতে শ্রমিক, বাঁশ, চারা, সার ও কীটনাশক বাবদ খরচ হয় প্রায় লাখ টাকা। প্রতিটি চারার দাম আট থেকে ১০ টাকা। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। এখনো মাঠে রয়েছে অনেক ফসল।  টমেটো চাষি মো. আবদুল মতিন বলেন, বন বেগুনের সঙ্গে টমেটোর চারা জোড়া লাগিয়ে বর্ষাকালে এই ফসলের চাষ এই এলাকায় শুরু হয় ২০ বছর আগে। টমেটো চাষ করে অনেকের দিন বদলেছে। হবিগঞ্জ, কুলাউড়া, সিলেট, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা মাঠে এসে টমেটো নিয়ে যান। বনগাঁও গ্রামের টমেটো চাষি মনির মিয়া বলেন, এবার টমেটোর চাষ এবং দাম ভালো। টমেটো চাষ করে তার আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। তিনি জানান, এ বছর চার কিয়ার (বিঘা) জমিতে টমেটোর চাষ করেছেন। তার খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এরই মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। আরও ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার বিক্রি করতে পারবেন। চাষিরা জানান, এসব খেত থেকে অন্তত কোটি টাকার টমেটো বিক্রি হবে। তবে চাষিদের অভিযোগ, এখানে কৃষি বিভাগের লোকজন আসেন না। শুধু ওষুধ কোম্পানির লোকজনই আসেন। এসব খেতে অস্থায়ী কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের। বিশেষ করে চা-বাগানের অনেক বেকার নারী কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। মাধবপুর চা-বাগানের বাসিন্দা আধামা অলমিক জানান, আবদুল মতিনের খেতে তারা ৩০ জন নারী কাজ করেন। প্রতিদিন ২০০ টাকা করে মজুরি পান। এ দিয়ে তাদের সংসারে ভালো সহযোগিতা হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, এ বছর ৭৩ হেক্টর জমিতে গ্রাফটিং টমেটো চাষ হয়েছে।
এরমধ্যে কমলগঞ্জে ৫০ হেক্টর আর বাকিগুলো অন্যান্য উপজেলায়। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৯৯০ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরে প্রায় ২২ টন টমেটো উৎপাদিত হয়েছে। কলম করা চারা বিক্রি করেও অনেক চাষি লাভবান হয়েছেন। একজন কৃষক ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। জেলার মধ্যে কমলগঞ্জ ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলায়ই বেশি টমেটোর চাষ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, টমেটোর ফলন এবং দাম দুটোই ভালো। প্রথমদিকে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত খুচরা বিক্রি হয়েছে। আর এখন ৭০-৮০ টাকা টমেটোর কেজি। বারি-৪ ও ৮ জাতের এই টমেটোর একটি গাছে গড়ে ৬ থেকে ৭ কেজি ফলন পাওয়া যায়। কৃষকদের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, চা-বাগানসহ প্রত্যন্ত এলাকায় আমাদের লোকজন কম যায়। তবে কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের না পাওয়ার কথা না। কৃষকদেরও হয়তো যোগাযোগ কম। যোগাযোগ বাড়ানো হবে। তিনি টমেটো চাষিদের বিনামূল্যে সার কীটনাশক ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান।

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর