পাহাড়ে মেঘলা চিতার রাজত্ব। অনেকটা বন প্রহরির মতো। পাহাড়ে পাহাড়ে চলে তার বিচরণ। গাছের মগডালে বসে করে শিকার। দূর দৃষ্টিতে যেনো আড়াল হতে পারেনা কেউ। তিকবুদ্ধি। নাকের মাধ্যমে অনুধাবন করতে পারে সবকিছু। এ চিতার বিচরণ দেখা গেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল রাঙামাটি লংগদু উপজেলার ভাসান্যাদম ইউনিয়নের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেঘলা চিতা অর্থাৎ ক্লাউডেড লেপার্ড। যার বৈজ্ঞানিক নাম নিওফেলিস নেবুলোসা। তবে স্থানীয়দের কাছে এটি লাম চিতা। কিংবা গেছো বাঘ নামেও পরিচিত। দেখতে অনেকটা বিড়ালের মতো। তবে আকারে বড় এবং হিংস্র। এ চিতার শরীর জুড়ে বড় বড় মেঘের আকৃতির ছোপ রয়েছে। মেঘরা চিতার পিঠের দিকে জলপাই হলুদের ওপর গাঢ় বাদামী লম্বাটে ও গোলাকার চাকতির মতো রয়েছে। মুখে ও পেটে কালো ছোপ রয়েছে। লেজে কালো ছোপ রয়েছে। এদের পেট সাদাটে। পুরুষ বাঘ স্ত্রী বাঘ অপেক্ষা আকারে বড় হয়। মাথাসহ এদের দেহের দৈর্ঘ্য ৯৫ থেকে ১২০ সেমি এবং লেজ ৭৫-৮৫ সেমি। মোটা ও লম্বা লেজ এদের সহজেই গাছের ডালে হাঁটাচলা ও লাফানোর সময় ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। দেহের তুলনায় এদের মাথা বড়। থাবাগুলোও বড়। কিন্তু পা খাটো। ওজনে মাত্র ১৭ থেকে ২০ কেজির মতো।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গেছো বাঘ সারা বিশ্বে বিরল। বিপন্ন ও দুর্লভ একটি প্রাণি। এখনো এদের সম্পর্কে গবেষকরা খুব বেশি একটা জানে না। বিড়াল জাতীয় প্রাণি। তবে এরা ঘনো বন কিংবা হিমালয়ের পাদদেশে দেখা যায়। এদের প্রধান বিস্তার হল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীনে। এদের সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম। তবে পার্বত্যাঞ্চলে এখনো মেঘলা চিতা চোখে পড়ে। রয়েছে অভায়াশ্রম।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আয়তন ১৬২.৪৩ বর্গমাইল। যা ৪২,০৮৭ হেক্টর এবং ১,০৩,৯৫৫.২০ একর। এখানে বন্যহাতি, স্তন্যপায়ী প্রাণী ও বহু প্রজাতির পাখি রয়েছে। বিশেষ করে ১০০ থেকে ৩০০ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন পাহাড় রয়েছে এখানে। তাই এখানে মেঘলা চিতা থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না। সম্প্রতি আমরা ক্যাপক্যামেরার মাধ্যমে মেঘলা চিতার সন্ধান পেয়েছি। এরা গভীর ও ঘন চিরহরিৎ বনাঞ্চলে থাকতে পছন্দ করে। এরা নিভৃতচারী প্রাণি। মানুষের সান্নিধ্য পছন্দ করে না। তাই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আশপাশে মানুষের বসতি থাকলেও এরা এখনো কোন মানুষের ক্ষতি করেনি।
বিডি প্রতিদিন/এএম