বগুড়ায় এখন শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুম চলছে। জেলার মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে ফুলকপি ও পাতাকপিসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজির আবাদ। প্রতিদিন ক্ষেত থেকে সবজি তুলে বাজারজাত করে আর্থিক অগ্রগতির স্বপ্ন দেখছেন সবজি চাষিরা। স্থানীয় বাজারগুলোতে উঠছে তাজা সবজি। ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা।
জানা যায়, শষ্যভান্ডার খ্যাত বগুড়া জেলায় সারাবছর বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে থাকেন কৃষকরা। বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট ও শেরপুরসহ অন্যান্য উপজেলার মাঠ জুড়ে শীতকালীন সবজিতে ভরে গেছে। চারদিকে তাকালে শুধু সবজির ক্ষেত চোখে পড়ে। শীত মৌসুমে বেশি সবজি চাষ হয় বগুড়ায়। কৃষকরা ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া তাদের উৎপাদিত সবজি উত্তোলন করে হাটে বাজারে কেনাবেচা শুরু করেছেন তারা। ইতিমধ্যেই আগাম জাতের সবজি চাষ করে বেশ ভালো দাম পেয়েছে খুশি চাষীরা। গোটা শীতকাল জুড়েই এ সবজি পাওয়া যাবে। মানসম্মত হওয়ায় গোটা দেশেই রয়েছে বগুড়ার উৎপাদিত সবজির চাহিদা। বগুড়ার সবচেয়ে বড় মোকাম মহাস্থান হাট থেকে প্রতিদিন পাইকাররা সবিজ নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। চাহিদা থাকায় দামও ভালো। ভালো দাম পাওয়ায় সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে এই অঞ্চলের কৃষকদের।
বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, শিশির ভেজা সকাল থেকেই সবজি চাষে ব্যস্ত চাষীরা। কেউ আগাম জাতের সবজি উঠাচ্ছেন আবার কেউ ক্ষেত পরিচর্যা করছেন ভালো ফলনের আশায়। ভালো দাম পাওয়ায় চাষীদের মধ্যে আগের চেয়ে আগ্রহ বেড়েছে। পতিত জমিগুলোতেও সবজি চাষ শুরু করেছেন তারা। গত বছরের তুলনায় এবার চাষের জমি বেড়েছে ৩’শ হেক্টর। শীতকালীন ফুলকপি, বাধাকপি, পটল, ঢেঁড়শ, সিম, বেগুন, মূলা, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি কেনাবেচায় সরগরম বগুড়ার হাটবাজার।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, বিভিন্ন ধরনের শাকসহ ৪২ প্রকারের সবজি উৎপাদন করছেন বগুড়ার চাষীরা। সারাবছর ২০ হাজার হেক্টর জমিতে এসব সবজি চাষ হয়ে থাকে গোটা জেলায়। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে প্রতি বছর ৪ লাখ টনের বেশি সবজি উৎপাদন হয় এই জেলায়। চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সোয়া ৩ লাখ টনেরও বেশি। ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত শীতকালীন মৌসুম।
বগুড়া সদর উপজেলার পল্লীমঙ্গল এলাকার চাষি আমিনুর প্রামানিক জানান, চলতি মৌসুমে আগাম সবজি চাষ করে তিনি লাভবান হয়েছেন। তবে কীটনাশক, সার বীজের দাম বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ সীমিত হচ্ছে। ভালো ফলনের আশায় তিনি ক্ষেত পরিচর্যা করছেন।
সদরের মানিকচক এলাকার আরেক চাষি সোহরাব উদ্দিন জানান, এবার আড়াই বিঘা জমিতে তিনি মূলা চাষ করে বেশ ভালো দাম পেয়েছেন। এখন আলু চাষ করছেন। আগাম আলুতেও লাভবান হবে বলে জানান তিনি।
শুক্রবার মহাস্থান হাটে পাইকারী প্রতি কেজি ফুলকপি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পিছ, লাউ প্রতি পিছ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, সিম ৭০ টাকা কেজি, মূলা ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পাতা পেয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মিষ্টি লাউ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজি মহাস্থান থেকে শহরসহ অন্যান্য বাজারে গিয়ে দাম বাড়ছে কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মতলুবর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সোয়া ৩ লাখ টনেরও বেশি। আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। মান সম্মত বীজ ও চারা ব্যবহার করে কৃষকরা ভালো ফসল উৎপাদন করছেন। এতে করে তারা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের উৎপাদন বাড়াতে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম