চাকরি ছেড়ে দিয়ে একই জমিতে মাল্টা চাষ এবং গাছের নীচে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন সফল উদ্যোক্তা নাঈম হুদা।
প্রকৌশলী নাঈম হুদা কেঁচো সার উৎপাদন করে প্রতিমাসে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা উপার্জন করেন। আর মাল্টা বিক্রি করে বাড়তি আয় করেছেন। জানা গেছে, ৮ জন বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠানে।
২০১৬ সালে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক শেষ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উত্তরা ইপিজেডে চাকরি নেন তিনি।
চাকুরিকালীন সময়ে তিনি অনুধাবন করতে পারেন, চাকুরিতে যে পরিমাণ সময় আর শ্রম দিতে হচ্ছে, সে অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন কম। তাই সিদ্ধান্ত নেন চাকরি ছেড়ে দেয়ার। বাড়িতে কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করার পরিকল্পনা আঁটেন। এ ভাবনা থেকেই নিজ বাড়িতে কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন কাজ শুরু করেন।
এরপর আর পেছন ফিরে তাঁকাতে হয়নি তাকে। চাকরি ছেড়ে ২০১৯ সালে শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদন। উৎপাদিত সার নিজের কৃষিকাজে ব্যবহার করার পর অতিরিক্ত সার বিক্রি করে প্রতিমাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করন তিনি। কেঁচো বিক্রি করেও মাসে অতিরিক্ত ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা তিনি আয় করেন। সব মিলিয়ে প্রতিমাসে নাঈমের কেঁচো সার ও কেঁচো বিক্রি করে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা উপার্জন হয। এর সাথে পরিধি বাড়ছে আয়ও বাড়ছে তার। পাশাপাশি একই জমিতে শুরু করেছেন মাল্টা চাষ।
নাঈম হুদা জানান, ২০১৯ সালে চাকরি ছেড়ে বাড়ির কৃষি কাজ শুরু করি। বাড়িতে প্রথমে কমলা, মাল্টা ও মিশ্র ফলের বাগান করি। বাড়ির পুকুরে মাছ চাষ করি। বাগান করতে গিয়ে দেখি ফলবাগানে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সারের প্রয়োজন হচ্ছে। তখন কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে দুই শতক জমিতে কেঁচো সারের একটা প্রজেক্ট করি।
নাঈম আরো বলেন, কেঁচো খামারে ভালো মুনাফা আসায় আমি এই সার ও কেঁচো নিয়ে গবেষণা শুরু করি। তখন হাউস ও রিং থেকে ট্রেতে এই সার উৎপাদন শুরু করলাম। এখন পরীক্ষামূলকভাবে বস্তার মধ্যেও শুরু করেছি কেঁচো সার উৎপাদন। ফলও ভালো পাচ্ছি। তিনি এখন কেঁচো সারের খামার সম্প্রসারণ করেছেন। এই খামার থেকে প্রতিমাসে ৪ থেকে ৫ টন কেঁচো সার উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিমাসে ২০০-৩০০ বস্তা ভার্মি কম্পোস্ট সার বিক্রি হয়। প্রতি বস্তা ৫৫০-৬০০টাকায় বিক্রি করি। দিন দিন বিক্রি বাড়ছে। একই সাথে এক জমিতে এবার মাল্টা চাষ শুরু করেছি এবং ভালো ফলনও হয়েছে। ২০শতক জমিতে এই চাষ করছি।
বৈকন্ঠপুর গ্রামের কৃষক শাকিল ইসলাম বলেন, জৈব সার নিয়ে কলা বাগান, লালশাক ক্ষেতে দিয়েছিলাম। কলা ও লালশাকের ফলন ভালো হয়েছে। এ জৈব সার ব্যবহার করায় রাসায়নিক সারে যে খরচ হত তার থেকে খরচ অনেক কম হয়েছে।
তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক হযরত আলী বলেন, নাঈমের সবজি ক্ষেতে জৈব সার ব্যবহারের কারণে তাঁর সবজির ফলন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি খরচও কম হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে সার কিনে আমার সবজি ক্ষেতে দিয়েছি। সবজি ক্ষেতের অবস্থা এখন ভালো।
বিডি প্রতিদিন/আশিক