বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত দানাদার ইউরিয়া সার প্রয়োগযন্ত্র নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এ প্রযুক্তি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। এর ব্যবহারে বীজ ও সারের অপচয় কমে লাভবান হবে কৃষক। মাদারীপুরসহ দেশের চারটি কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে যন্ত্রটির কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য গবেষণা চলছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্ভাবিত দানাদার ইউরিয়া সার প্রয়োগযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় সারের প্রায় ৪০ শতাংশ সাশ্রয় করতে সক্ষম। ফলে সারের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং পরিবেশে নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমন কমে। ফলে ফলন ভালো হয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। প্রচলিত পদ্ধতিতে যেখানে বিঘাপ্রতি ১৩ মণ ধান উৎপাদন হয় সেখানে এই পদ্ধতিতে বিঘাপ্রতি ১৭ মণ ধান উৎপাদন হচ্ছে। এতে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমছে, অন্যদিকে বাড়ছে ফলন। আর ক্ষতিকর নাইট্রোজেন না ছড়ানোয় পরিবেশের ভারসাম্যও ঠিক থাকছে। ব্রি দানাদার ইউরিয়া সার প্রয়োগযন্ত্র মাটির ৭-৮ সেন্টিমিটার গভীরে সরাসরি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে সক্ষম। যা সারের প্রায় ৪০ শতাংশ সাশ্রয় করতে সহায়তা করে।
গবেষণার অংশ হিসেবে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের কুমেরপাড় এলাকার কৃষক জহির হাওলাদার, ঠান্ডু হাওলাদার, দেলোয়ার হাওলাদার, দুলাল হাওলাদারসহ পাঁচজন কৃষকের চার বিঘা জমিতে রোপা আমনের ব্রি ধান-৮৭ চারা রোপণ করা হয়। প্রায় ১৫ দিন পরে এই যন্ত্রের মাধ্যমে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। এতে বিঘাপ্রতি ১৬ কেজি সার প্রয়োগ করা হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে বিঘাপ্রতি সার লাগত ২৪ কেজি। সেক্ষেত্রে বিঘাপ্রতি ৮ কেজি সারের টাকা সাশ্রয় হয়েছে কৃষকের।
এ প্রসঙ্গে মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে ব্রির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, ‘এটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন, যা সারের অপচয় কমিয়ে ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকদের আর্থিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।’ প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান মিলন বলেন, ‘এটি দীর্ঘমেয়াদে কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে সহায়ক।’ কৃষক জহিরুল ইসলাম হাওলাদার জানান, এই যন্ত্র ব্যবহার করে তার জমিতে সারের অপচয় কমেছে এবং ফলনও ভালো হয়েছে।