উত্তুরে খুন্তে হাঁস বা খুন্তেহাঁসের দেখা মিলেছে তিস্তার চরে। অ্যানাটিডি পরিবারের অধীনে অ্যানাসগণের অন্তর্ভুক্ত এই হাঁস বিপদগ্রস্ত প্রজাতির তালিকায়। সচারাচর এর দেখা মেলে না। বিশেষ আকৃতির ঠোঁট দেখে খুব সহজে এদের চেনা যায়।
এই হাঁস সম্পর্কে জানা গেছে, শীতকালে এদের বাংলাদেশে কদাচিৎ দেখা যায়। এরা বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি হিসেবে পরিচিত। উত্তুরে খুন্তেহাঁসকে সহজেই এদের বড় চামচাকৃতির ঠোঁট দেখে শনাক্ত করা সম্ভব। এরা আকারে ১৯/২০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। পাখার বিস্তৃতি ৩০ ইঞ্চির মতো হয়ে থাকে এবং ওজনে এরা ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম হতে পারে। পুরুষ হাঁসটির মাথার রঙ গাঢ় সবুজ। বুকের রঙ সাদা ও পেট বাদামি রঙের হয়ে থাকে। সামনে ডানার পালকের রঙ ধূসর নীল। অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ হাঁস দেখতে স্ত্রী হাঁসের মতো। স্ত্রী হাঁসের গায়ের রঙ খয়েরী এবং এরসাথে কালো কালো ফোঁটা দাগ রয়েছে। এদের দেখতে অনেকটা স্ত্রী নীলমাথা হাঁসের মতো মনে হয়। তবে এদের ঠোঁট অনেক বড় বলে অন্য হাঁসের চেয়ে আলাদা। ঠোঁট কমলা রঙের। সামনের ডানার রঙ খয়েরী । এই হাঁস জলজ উদ্ভিদ ও পানিতে থাকা অমেরুদণ্ডী প্রাণিদের খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। পুরুষ পাখি প্রজননের সময়ে কিছুটা হিংস্র স্বভাবের হয়ে থাকে। অন্য পুরুষের কাছ থেকে নিজের স্ত্রী ও এলাকাকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। এরা জমিতে বাসা বানায়। স্ত্রী হাঁস একসাথে ৯ টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। পাখিটি অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া বিশ্বের সব মহাদেশে দেখা যায়। ইউরোপের উত্তরাঞ্চল, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার অধিকাংশ অঞ্চল জুড়ে এরা প্রজনন করে।
উত্তুরে খুন্তে হাঁসের ছবিটি গত বৃহস্পতিবার রংপুরের তিস্তা নদীর চর এলাকা থেকে তুলেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক শৌখিন আলোকচিত্রী ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বলেন, কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমছে, তবে এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটিকে এখনো সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল