বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রথমবারের মতো ধানের ক্ষেত থেকেই আক্রান্ত ধান গাছের ছবি অ্যাপসে প্রেরণের মাধ্যমে রোগবালাই চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে ‘রাইস সল্যুশন’ (সেন্সর-ভিত্তিক ধানের বালাই ব্যবস্থাপনা) নামক মোবাইল অ্যাপস তৈরি করেছে। বর্তমানে ‘রাইস সল্যুশন’ মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে রোগবালাই ও পোকামাকড় সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার ছবি বা তথ্য ইনপুট হিসেবে প্রদান করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রেরিত ছবির রোগ বা পোকামাকড়ের সমস্যা নির্ণয় করে সঠিকতার হার নির্ধারণ করে ব্যবস্থাপনামূলক পরামর্শ প্রদান করছে।
ফলে কৃষক পর্যায়ে অ্যাপসটির মাধ্যমে সেবা প্রাপ্তিতে সময়, খরচ ও যাতায়াত সাশ্রয়সহ মাঠের সমস্যা মাঠেই সমাধান হচ্ছে। রবিবার ব্রি রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে ধানের রোগ ও পোকামাকড় শনাক্তকরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্টেকহোল্ডার প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্টেকহোল্ডার প্রশিক্ষণে উক্ত প্রকল্পের পিআই মো. মাহফুজ বিন ওয়াহাব বলেন, ওয়ান আইসিটি লিমিটেডের কারিগরি সহযোগিতায় এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের কোন স্থানে কোন রোগ ও পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব বেশি, তা নির্ণয়ের লক্ষ্যে গবেষক ও কৃষকবান্ধব রিয়েল টাইম ড্যাশবোর্ড তৈরি করা হচ্ছে। দেশে পোকামাকড়ের আক্রমণসহ বিভিন্ন কারণে মোট ফসলের ১০-১৮ ভাগ উৎপাদন পর্যায়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে কৃষকের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে মাঠ পর্যায়ে আধুনিক ধান চাষে রোগ ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি যথাযথ আধুনিক পদ্ধতির সঠিক ব্যবহার ও ফিডব্যাক ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে কৃষক কাঙ্ক্ষিত ফলন থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ফলে কৃষক ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তাসহ ব্যবহারকারীরা রোগ ও পোকামাকড় থেকে ধানের ক্ষতি হ্রাসকরণ এবং ধানের ফলন বৃদ্ধিতে হালনাগাদ প্রযুক্তি প্রয়োগ সম্পর্কে ধারণা পাবেন। এ ছাড়া কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
প্রশিক্ষণে প্রধান অতিথি, কেজিএফ’র সিনিয়র স্পেশালিস্ট (উদ্যানতত্ত্ব) ও উক্ত প্রকল্পের রিসার্চ আডভাইজার ড. মো. নাজিরুল ইসলাম বলেন, আগামীতে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে তৈরিকৃত ড্যাশবোর্ডটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি উল্লেখ করেন, ব্রি’র সকল আঞ্চলিক কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ছবি এই ড্যাশবোর্ডে নিয়মিত সংযোজন হওয়ার কারণে এলাকাভিত্তিক ধানের ক্ষেত্রে কোন এলাকায় কোন পোকামাকড় বা রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি, তা জানা সম্ভবপর হবে। তদানুযায়ী বিজ্ঞানীদের গবেষণা কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক টুলস হিসেবে কাজ করবে।
প্রশিক্ষণে সভাপতিত্ব করেন ব্রি রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পিএসও ও অফিস প্রদান ড. মো. রকিবুল হাসান। এ ছাড়া উক্ত প্রকল্পের কো-পিআইবৃন্দ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক, রংপুর জেলার ডিএই’র কর্মকর্তাবৃন্দ, কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার, প্রগতিশীল কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা এবং বিভিন্ন এগ্রিবিজনেস কমিউনিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই