আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামীণ জনপদের শত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্পগুলো বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পরিবারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক পণ্য বাজার দখল করায় বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের কদর কমে গেছে। ফলে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে গ্রামীণ এই কুটির শিল্পটি।
পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের সঠিক পৃষ্টপোষকতার অভাবে অনেকেই এখন কুটির শিল্পের এ পেশা পরিবর্তন করেছেন। বংশ পরস্পরায় যারা এ পেশার সাথে এখনও জড়িয়ে রয়েছেন তাদের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে।
ফেনীতে গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম ভিত বাঁশ ও বেতের তৈরি ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। প্লাস্টিক পণ্যের অবাধ ব্যবহার, করোনা মহামারির দীর্ঘ প্রভাব ও নানা সংকটে এ শিল্পের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা চাপা পড়ছে।
এক সময় জেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে ঘরবাড়ি নির্মাণ, মৎস্য শিকারের সরঞ্জাম, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ বাহারি রঙের গৃহস্থালি আসবাবপত্র তৈরিতে বাঁশ ও বেত প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হতো। গ্রামীণ হাটবাজারে দেখা যেত বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসপত্র।
জেলার সোনাগাজীর উপজেলার ৩ নং মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের বক্তারমুন্সী এলাকার এক বৃদ্ধ বলেন, এক সময়ে লেমুয়া, ভোর বাজার, লস্করহাট, ধলিয়া, বক্তারমুন্সী, কাজীরহাট ও সোনাগাজীর গ্রামীণ জনপদে বাঁশ-বেত সহজলভ্যতা ছিল। এসব গ্রামে বাঁশ ঝাড় ও বেত ঝাড় ছিল চোখের পড়ার মতো। এখন আর এসব দেখা যায় না। বিলুপ্তপ্রায় বাঁশ ও বেত। স্থানীয় লোকজনের মতে- আগে গ্রামীণ নারীরা ডালা, কুলা, চেয়ার, টেবিল, বুকসেল্ফ, মোড়া, ফুলদানি, হাতপাখা, চালনী, চাটাইম ধাইজ্যা, লাই খারাং তৈরিতে ব্যস্ততম সময় পার করতো। তাদের হাতে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চালাতেন।
জেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা যায়, যেসব দোকানে বাঁশ বেতের তৈরি জিনিসপত্র পাওয়া যেত, এখন কিছু জিনিপত্র পাওয়া গেলেও দাম আকাশ ছোঁয়া।
২৪ বছর ধরে বেত শিল্পের সাথে জড়িত ফেনী সেন্ট্রাল হাই-স্কুলের সামনের এক ব্যবসায়ী ছনুয়ার বাসিন্দা মোঃ মন্নান জানায়, মোমবাতির মতো নিভু নিভু করে ব্যবসা চলছে, প্লাস্টিকের যুগে এই শিল্পের চাহিদা কমে যাচ্ছে। আগামী দশকে হয়তো হারিয়ে যাবে এই শিল্প।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প (নাসিব) ফেনী জেলা কমিটির সভাপতি ইফতেখার রিপন জানান, আগের মতো এখন আর হাট-বাজার ও বাড়িতে বাঁশ-বেতের কদর নেই। বর্তমান মিল-কলকারখানা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের অনেক পুরনো ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আহমেদ আলী (বিভোর) বলেন, এখন যেভাবে ঘরে ঘরে প্লাস্টিকের জিনিসপত্রে ব্যবহার বাড়ছে, এতে মানুষের মধ্যে রোগবালাইয়ের ঝুঁকি বাড়বে এবং পরিবেশ দূষণের শিকার হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল