গানের পাখি সিঁদুরে মৌটুসি। এরা চমৎকার জিট্-জিট্ স্বরে গান গেয়ে মুগ্ধ করতে পারে। বেশ চঞ্চল, বেশিক্ষণ এক স্থানে স্থির থাকতে পারে না। বাতাসের ঢেউয়ে তালে তালে এক গাছ থেকে আরেক গাছে বিচরণ করে। এই পাখি খুব একটা দেখা যায় না। সম্প্রতি এই পাখির দেখা মিলেছে কুড়িগ্রাম জেলায়।
পাখিটি সম্পর্কে জানা গেছে, পুরুষ পাখি লম্বা ১৫ সেন্টিমিটার, স্ত্রী পাখি ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেহের তুলনায় লেজ কিছুটা বড়। ঠোঁট লম্বা, বড়শির মতো বাঁকানো। পুরুষ পাখির কপাল উজ্জ্বল বেগুনি, তার ওপর হালকা ডোরা দাগ। মাথার পেছন থেকে পিঠ ও ডানার কিছু অংশ সিঁদুরে লাল।
পিঠের শেষ থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত হলুদাভ-জলপাই। লেজ বেগুনি। থুতনি থেকে বুক পর্যন্ত সিঁদুরে লাল। পেটের দিকটা হলুদাভ-জলপাই। স্ত্রী পাখির শরীর জলপাই রঙের। লেজের অংশ সাদা। প্রধান খাবার ফুলের মধু। ভূমি থেকে ২ মিটার উঁচুতে গাছের ডালে অথবা গুল্মলতা আচ্ছাদিত গাছের ডালে থলে আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২টি। ফুটতে লাগে ১৫ থেকে ১৭ দিন। সিঁদুরে মৌটুসির বৈজ্ঞানিক নাম Aethopyga siparaj। সিঁদুরে-লাল মৌটুসি নেক্টার্নিডি গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত। পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়।
সিঁদুরে মৌটুসি পাখির ওজন মাত্র ছয়-সাত গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঠোঁটের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত লম্বা ১৪-১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। যার মধ্যে লেজ চার ও ঠোঁট দুই সেন্টিমিটার। এই পাখি অন্যান্য মৌটুসির মতো শূন্যে স্থির থেকে ফুলের মধু পান করে। মধুর অভাবে ছোট ছোট পোকা ও মাকড়সাও খেতে পারে। গাছের পাতায় মাকড়সার জাল ও শেওলা দিয়ে ছোট ঝুলন্ত বাসা বানায়। বাসার একদিকে থাকে প্রবেশ পথ।
সম্প্রতি কুড়িগ্রাম থেকে এই পাখিটির ছবি তুলেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌখিন আলোকচিত্রী ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বলেন, এই পাখি এখনো আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই