রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রথমবারের মতো ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় এমসিকিউ এর পরিবর্তে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পরীক্ষা পদ্ধতিতে আনা হচ্ছে আরো কিছু পরিবর্তন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, রাবিতে এবার মূল ভর্তি পরীক্ষার আগেই পরীক্ষার্থীদের একবার বাচাই করে নেয়া হবে। যারা ভর্তি পরীক্ষা দিবে তাদেরকে প্রথমে একবার রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার একটা নুন্যতম রেজাল্ট চাওয়া হবে। যাদের সেই রেজাল্ট থাকবে তারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কোনো ফি দিতে হবে না।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট অনুযায়ী যাদের মোট রেজাল্ট বেশি হবে তাদের মধ্য থেকে প্রতি ইউনিটের জন্য ১৬ হাজার পরীক্ষার্থীকে মূল পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা হবে। নির্বাচিত পরীক্ষার্থীরা মূল পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদন হবে। আর ভর্তি পরীক্ষা হবে লিখিত পদ্ধতিতে। যেখানে ২ ঘন্টার মধ্যে ১০০ নম্বরের পরীক্ষার দিতে হবে।
তবে কেন এই পরিবর্তন জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষার্থীদের অর্থ সাশ্রয় ও ভোগান্তি কমাতে ভর্তি পরীক্ষার ধরনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। মেধা যাচাইয়ে এমসিকিউ পরীক্ষার বিষয়ে নানান কথাবার্তা আছে। তাই এ বছর থেকে আমরা সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভর্তি উপ-কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই ঘণ্টায় ১০০ মার্কসের পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এটা প্রাথমিক একটা সিদ্ধান্ত। ভর্তি কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
তবে বিগত বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল মোট ১১ টি ইউনিটে। আর নতুন নিয়ম অনুযায়ী এই বছর থেকে ভর্তি পরীক্ষা হবে চারটি ইউনিটে।
এবিষয়ে একাডেমিক শাখা বলছে, এবছর A, B, C, D নামে হবে এই ৪ টি ইউনিট। যার মধ্যে A ইউনিটে থাকবে কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান ও চারুকলা অনুষদ, B ইউনিটে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, C ইউনিটে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ এবং D ইউনিটে জীব, ভূবিজ্ঞান ও কৃষি অনুষদ।
এই পদ্ধতিতে পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও অর্থ সাশ্রয় হবে জানিয়ে উপ-উপাচার্য বাংলাদেশ প্রতিদনকে বলেন, ‘এর আগে অনেকদিন ধরে অনেকগুলো ইউনিটে পরীক্ষা নেওয়া হতো। পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও অর্থ সাশ্রয়ের বিষয়টি বিবেচনা করে এবার ইউনিট কমিয়ে ৪টি ইউনিটে দুই দিনে পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে আগামী ২২ ও ২৯ অক্টোবর তারিখে পরীক্ষার দিন ঠিক করা হয়েছে। তবে ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা থাকায় ভর্তি কমিটির সভায় তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।’
তবে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন কেমন হবে জানতে চাইলে কলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ফজলুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পরীক্ষায় সংক্ষিপ্ত ও বর্ণনামূলক উভয় প্রশ্নই থাকবে। উভয় ধরণের প্রশ্নের উত্তর শিক্ষার্থীকে দিতে হবে। আর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা হবে রাউন্ড পদ্ধতিতে। যে পরীক্ষায় যতটি প্রশ্ন আসবে, সেই পরীক্ষার খাতা ততজন শিক্ষক দিয়ে মূল্যায়ন করা হবে। এতে করে কোনো খাতায় পক্ষপাতভাবে কম-বেশি নম্বর নম্বর দেয়ার সুযোগ থাকবে না।
তিনি আরো বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষাকে আরো বেশি স্বচ্ছ করার জন্যই এই পদ্ধতি গ্রহণ করা হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে পরীক্ষার সময় ডিভাইস ব্যবহারসহ বিভিন্ন রকম জালিয়াতির খবর পাওয়া যেত। সব রকমের জালিয়াতি ঠেকাতে এই পদ্ধতি নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া আমরা যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে যাচ্ছি তাতে আমরা গধবাধার বাইরে গিয়ে সৃজনশীল শিক্ষার্থী যাচাই করে নিতে পারব।
বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর