১৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০৮:২৮

শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের মেসেঞ্জার গ্রুপে আবরারকে হত্যার নির্দেশনা দেয় রবিন

অনলাইন ডেস্ক

শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের মেসেঞ্জার গ্রুপে আবরারকে হত্যার নির্দেশনা দেয় রবিন

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পাঁচ দিনের রিমান্ডের চতুর্থ দিন গতকাল অনিক  সরকার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। একই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মাজেদুল ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। শুক্রবার ভোরে সিলেটের শাহ কিরণ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল বিকালে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক নাভানা খায়ের জেসি। এর আগে বেলা ১১টায় রাজধানীর উত্তরা-১৪ নম্বর সেক্টর থেকে আরেক এজাহারভুক্ত আসামি মোয়াজ আবু হুরায়রাকে (২০) গ্রেফতার করা হয়। মোয়াজ কিশোরগঞ্জের পিরপুর গ্রামের মাশরুর-উজ-জামানের ছেলে। তিনি বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র এবং শেরেবাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। আদালত সূত্র জানায়, গতকাল সকালে অনিক সরকারকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি আসামির স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারের জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম আসামি অনিকের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেন দেন। গত ৮ অক্টোবর অনিক সরকারের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। আবরার হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল এবং শুক্রবার বহিষ্কৃত ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়নও দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ জানায়, জবানবন্দিতে জিওন বলেছেন, বুয়েট শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান রবিনের নির্দেশে আবরারকে গত ৬ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে কয়েকজন ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনেন। কক্ষটি ছিল ইফতির, মোস্তফা রাফিদ ও তানভীরের। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শিবির শনাক্ত করা। প্রথম দিকে আবরার নামগুলো বলছিলেন না। এরপর আবরারের রুম থেকে দুটি মোবাইলফোন সেট ও তার ব্যবহার করা ল্যাপটপ নিয়ে আসা হয়। ওই সময় তিনি এবং মেহেদি হাসান রবিন ওই রুমে যান। শিবির কারা করে তা জানতে তারা আবরারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। এর পরও আবরার মুখ খোলেননি। একপর্যায়ে সামসুল আরেফিন ক্রিকেট স্টাম্প নিয়ে আসেন। তিনি ও মেহেদি হাসান তাকে চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন। পরে ইফতি স্টাম্প দিয়ে মারধর শুরু করেন। তিনি অনেকগুলো বাড়ি মারেন। এ সময় অনিক সরকার স্টাম্প দিয়ে তাকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। পায়ের পাতা, হাঁটু, হাতেও পেটান। তিনিও কিছু কিল-ঘুষি মারেন। পরে স্টাম্প দিয়ে হাঁটুতে পেটান। এরপর ধাপে ধাপে অন্যরা ভিতরে এসে তাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়েন। কয়েকবার বমি করেন। এরপর কোলে করে সিঁড়িঘরের পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর পুলিশ ও চিকিৎসকদের খবর দেওয়া হয়। এরপর চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ইফতি তার জবানবন্দিতে বলেছেন, গত ৪ অক্টোবর বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে একটি নির্দেশনা দেয়। তাতে বলা হয়, আবরার শিবির করে, তাকে ধরতে হবে। এরপর মেসেঞ্জার গ্রুপে সাড়া দেয় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা। আবরার তখন বাড়িতে থাকায় ও সকলকে বলে- ‘ওকে বাড়ি থেকে ফিরতে দেন।’ গত ৬ অক্টোবর রাত ৮টার কিছু পর আবরারকে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতে রবিন বেশ কয়েকটি চড় মারে আবরারকে। রাফাত স্টাম্প এনে সকালের হাতে দেয়, স্টাম্প দিয়ে চার-পাঁচটি আঘাত করে সকাল। এতে স্টাম্পটি ভেঙে যায়। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক অনিক সরকার স্টাম্প দিয়ে আবরারের হাঁটু, পা, পায়ের তালু ও বাহুতে মারতে থাকে। তখন জিয়ন আবরারকে চড় মারে এবং স্টাম্প দিয়ে হাঁটুতে বাড়ি দেয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সকাল ক্যান্টিনে খেতে যায়। মিনিট বিশেক পর ফিরে এসে দেখে আবরার অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সে মেঝেতে শুয়ে আছে। সকাল তখন আবরারকে ধমক দিয়ে উঠে দাঁড় করায়। কয়েকটি চড় মারে। মুজাহিদ তখন কক্ষে থাকা স্কিপিং রোপ দিয়ে আবরারকে মারে। সকাল আবার স্টাম্প দিয়ে আবরারের হাঁটু ও পায়ে আঘাত করে। তানভীর তখন চড়-থাপ্পড় মারে। রাত ১১টার দিকে অনিক আসে। হঠাৎ অনিক স্টাম্প দিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে এলোপাতাড়ি শতাধিক আঘাত করে। আনুমানিক রাত ১২টার পর অনিক আবরারকে মারা থামিয়ে কক্ষের বাইরে যায়। তখন আবরার অসুস্থ হয়ে পড়ে ও জানায় তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরই আবরার বমি করে। তখন রবিন আবরারকে দেখে বলে, ‘ও নাটক করছে’। এরপর আবরারকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়। এ সময় অমিত সাহা খুদে বার্তা পাঠিয়ে সবকিছু জানতে চায় এবং আবরারকে আরও মেরে আরও তথ্য বের করতে বলে। আবরারের অবস্থা খুব খারাপ জানালে অমিত তাকে হল থেকে বের করে দিতে বলে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর