পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় এক চাকরি প্রার্থীর উপাচার্য রোস্তম আলীকে দেয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ার অডিও ফাঁসের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। অডিও ফাঁসের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো, ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করায় তিন শিক্ষককে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে শোকজ প্রত্যাহার, প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ করেন।
শিক্ষার্থীরা জনান, গত বৃহস্পতিবার পাবিপ্রবির ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার নিয়োগের প্রতিশ্রুতিতে মনিরুল ইসলাম নামের এক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই দফায় আট লাখ টাকা ঘুষ নেন বলে অভিযোগ ওঠে উপাচার্য এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের আগের দিনেও মুঠোফোনে আশ্বাস দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে বলেন ভিসি। ভিসির সাথে মনিরুলের একাধিক কথাপোকথনের অডিও ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রথমে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন অর্থনীতি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ইয়াহিয়া বেপারী, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রভাষক কমরুল হাসান এবং ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক কামাল হোসেন।
পরে, উপাচার্যকে নিয়ে তাদের মন্তব্য মানহানিকর আখ্যা দিয়ে রবিবার তিন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নোটিশে কেন তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা আগামী সাত দিনের মধ্যে জানতে চাওয়া হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রম্ম বলেন, নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ওই শিক্ষকরা উপাচার্যর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে মানহানিকর মন্তব্য করেছেন। ফলে তাদেরকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। জবাব পেলে পরবর্তি ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
তবে নোটিশ পাওয়া শিক্ষকদের দাবী, অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে হেনস্তার হুমকি দেন ভিসি। একাধিক বার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টির প্রতিকার চেয়েও ফল মেলেনি।
শোকজ নোটিশ পাওয়া নগর ও অ ল পরিকল্পনা বিভাগের প্রভাষক কমরুল হাসান বলেন, উপাচার্যকে নিয়ে কোন মানহানিকর মন্তব্য করা হয়নি। ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠনের ‘ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বংলাদেশ’ ফেসবুক গ্রুপে উপচার্যর সঙ্গে এক চাকুরি প্রার্থীর কথোপকথনের একটি অডিও প্রকাশ করা হয়েছিল। তার নিচে শুধু মন্তব্য করেছিলাম ‘এখন কি হবে?’। এতেই শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে কতটা স্বেচ্ছাচারি হয়ে বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে পাবিপ্রবি প্রশাসন।
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক কামাল হোসেন বলেন, তিনি উপাচার্যকে নিয়ে কোন মানহানিকর কথা ফেসবুকে লিখেন নাই। ফেসবুকে ঘটনাটি দ্রুত ছড়াচ্ছিল। ফলে তিনিও একই ধরনের কথা লিখেছিলেন। এখানে উপাচার্যের মানহানির মত কিছু বলা হয়নি। কেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ার অস্বচ্ছতার প্রতিবাদ করা হয়েছে। প্রশাসন তাদের অপকর্ম ঢাকতে না পেরে আমাদের হয়রানি করছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. প্রীতম কুমার দাস বলেন, আমার শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু তারা কোনো লিখিত দাবি জানায়নি। লিখিত পেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করবো। আর শিক্ষকদের শোকজ করা হয়েছে, তারা জবাব দিলেই বিষয়টি সমাধান হয়ে যায়, সেখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা কি আমরা বুঝতে পারছি না।
শিক্ষকদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টির জন্য শিক্ষার্থীদের উষ্কানী দিচ্ছে জানিয়ে উপাচার্য এম রোস্তম আলী বলেন, অডিও ফাঁস ও আন্দোলন পূর্ব পরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ। মনিরুল লিখিত পরীক্ষায় পাস করতে না পেরে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
উপাচার্য আরো বলেন. লিখিত পরীক্ষা শেষে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ৬ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় তাঁরা কেউ চাকুরির জন্য সন্তোসজনক ছিলেন না। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিল করা হয়েছে। নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে আবার প্রক্রিয়াটি করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন