দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে যেকোনো মুহূর্তে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করেছেন, আন্দোলনকারীদের হয়রানি করার জন্য অজ্ঞাতনামা নিপীড়নমূলক মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শনিবার দিনব্যাপী ধর্মঘট-অবরোধ কর্মসূচি শেষে বিকেলে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে ‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চে’ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আন্দোলনের মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক রায়হান বলেন, ‘আন্দোলনের দুই সংগঠকের উপর হামলার পর সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি আহত বলে ঘোষণা করা হয়। এটা একটা নাটক। এদিকে আবার মামলা করা হয়েছে। এই প্রশাসন একটি মামলাবাজ প্রশাসন। এটি একটি প্রতারণাপূর্ণ মামলা। আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে। আমরা এই ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করব। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি এখন থানা পুলিশের আশ্রয় নিচ্ছেন। হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয় আমলে না নিয়ে গায়েবি মামলা করছে তারা।’ তিনি আরও বলেন, নিপীড়নমূলক গায়েবি মামলার প্রতিবাদে ও উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে যেকোন মুহুর্তে অবরুদ্ধ করা হবে।’
এ সময় আন্দোলনকারী ও সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের মুখপাত্র খান মুনতাসির আরমানও বক্তব্য রাখেন। জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা সহকারী প্রক্টরের উপর হামলা করেছে দাবি করে অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনের নামে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শুক্রবার রাতে আশুলিয়া থানায় দণ্ডবিধি আইনের ১৪৩, ৩০৭, ৩২৩, ৩২৪ ও ৩৪ ধারায় এ মামলা করা হয়েছে। ১৪৩ ধারায় বলা হচ্ছে, অবৈধ গণসংযোগ, ৩২৪ ধারায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্বারা রক্তপাত ঘটানো, ৩০৭ ধারায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।
এদিকে, দিনব্যাপী চলমান ধর্মঘট-অবরোধে বন্ধ ছিল সন্ধ্যাকালীন কোর্স। সকাল থেকে পূর্ব ঘোষিত ধর্মঘট-অবরোধের সমর্থনে বিভিন্ন অনুষদ ভবনের সামনে অবস্থান করেন আন্দোলনকারীরা। তবে সন্ধ্যাকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনকে আসামি করে প্রশাসনের দায়ের করা মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সাড়ে ১৪শ কোটি টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ঈদ সেলামি দেয়ার অভিযোগ উঠে। এরপর থেকে গত তিন মাস যাবত উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গড়ে উঠা সংগঠন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক