রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণের ঘটনার মূল আসামি মাহফুজুর রহমান শারুদকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে, ধর্ষণকারী মাহফুজুর ও তার সহযোগী মামলার আরেক আসামি রাফসানের পরিবার থেকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মামলার মূল আসামি শারুদ ও রাফসানের পরিবার থেকে বারবার যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা মামলা তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রকম প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার মূল আসামি মাহফুজুর শারুদের পরিবার থেকে ভুক্তভোগীকে ফোন দিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে বলে তার পরিবার থেকে জানানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কোনো অভিযোগ করেছে কি-না এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে জানানো হয়, ‘সে (ভুক্তভোগী) হলের আবাসিকতার জন্য আবেদন করেছে, কিন্তু এখনও সিট পায়নি। বাইরে অবস্থান করা সম্ভব না বলে সে ক্যাম্পাসে ফিরতে পারেনি। ক্যাম্পাসে ফিরলেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শারুদের ছাত্রত্ব বাতিলের জন্য আবেদন করব।’
এদিকে, আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিহার থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুর রহমান। তিনি জানান, আসামিরা মামলার স্বীকারোক্তি দেওয়ার সময় বলেন, তারা ঘটনার আগের দিন রাজশাহী নগরের তালাইমারীর একটি চায়ের দোকানে বসে পরিকল্পনা করেন। মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে ওই সময় উপস্থিত ছিলেন তারেক মাহমুদ ওরফে জয়, জীবন, রাফসান ও প্লাবন তালুকদার। পরে তারা এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করে নেয় আসামি বিশালকে। মাহফুজুর তখন বন্ধুদের জানিয়েছিল ওই ছাত্রীটি তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু তিনি বিয়ে করতে চান না। তাই তাকে (ছাত্রী) দূরে সরিয়ে দিতে ও তার পরিবার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেই ধর্ষণ ও ভিডিও করার পরিকল্পনা সাজায়।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ জানুয়ারি রাবির অর্থনীতি বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজুর শারুদ তার বান্ধবীকে (রাবি ছাত্রী) কাজলা সাঁকোপাড়া এলাকার একটি মেসে নিয়ে ধর্ষণ করেন। শারুদের বন্ধু বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যায়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী প্লাবন সরকার ও রাফসান, কাজলা এলাকার জয়, জীবন ও বিশাল মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন। ভুক্তভোগীর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন তারা। পরে টাকা না দিলে ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পুরো ঘটনাটি পরিবারের কাছে জানানোর পর ২৭ জানুয়ারি দুপুরে ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে ছয় জনকে আসামি করে ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন। মামলার দিনই মূল আসামি শারুদসহ তার সহযোগী রাফসান ও প্লাবন তালুকদারকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি তারেক মাহমুদ ও জীবনকে নগরীর কাজলা এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। মামলার আরেক আসামী বিশাল পলাতক আছেন বলে জানিয়েছেন মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ পারভেজ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন