অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ৩৪ শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে শিক্ষক নিয়োগের অনিয়মের প্রমাণ পায় তারা। সেই প্রমাণের প্রেক্ষিতে উপাচার্যসহ ৩৪ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করে ইউজিসি।
তবে ইউজিসির এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩০ জন শিক্ষক ইউজিসিকে আইন জেনে ও আইন মেনে নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ইউজিসি যেন ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার মত নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মকাণ্ড জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মুজিবুর রহমানকে দেয়া এক চিঠিতে এসব বিষয় উল্লেখ করেন জুলাই ২০১৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা।
সেই চিঠিটি বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, নতুন নিয়োগ পাওয়া ৩০ জন শিক্ষক স্বাক্ষর করেছে। আর অন্য নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় স্বাক্ষর করতে পারেনি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, 'সম্প্রতি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা মারফত আমরা জানতে পারলাম যে, আমাদের নিয়োগকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্য নামধারী কতিপয় সদস্যের ভিত্তিহীন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন একটি আইন বহির্ভূত ও বেআইনি তদন্ত কমিটি করে আমাদের আইনসম্মত নিয়োগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এমনকি উক্ত তদন্ত কমিটি আমাদের সকলকে অযোগ্য অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন যোগ্যতা উল্লেখ করেছে। শিক্ষামন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে প্রতিবেদন পূর্বক আমাদের সম্মত নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করেছে। এছাড়াও কমিশনের প্রতিবেদন এর সূত্র ধরে এবং সদস্যদের বক্তব্যের আলোকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশ এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও ও উপাচার্য মহোদয়সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে ধারাবাহিক বিরূপ মন্তব্য করা হচ্ছে। এরকম নজিরবিহীন অপতৎপরতা আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দিনকে দিন বাড়িয়ে তুলছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ক্ষমতা বহির্ভূত কার্যকলাপ একটি স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রচণ্ড মর্যাদাহানিকর এবং ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস তুললো।
চিঠিতে তারা আরো বলেন, 'আমরা স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান ও নীতিমালার আলোকে প্রদত্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশে প্রেক্ষিতেই সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদনের মাধ্যমে আমরা নিয়োগ পেয়েছি। এবং সুনামের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা কার্যক্রম ভূমিকা রাখছে। সুতরাং কোন নিয়োগ নীতিমালা শিথিল আর কোনটি উদ্দেশ্যমূলক তথাকথিত সর্বজনবিদিত সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা দৃঢ়তার সাথে জানাতে চাই যে, আমরা আমাদের স্বীয় যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই যথাযথ ও নিয়ম-কানুন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পেয়েছি। সুতরাং ত্রুটিপূর্ণ নিক্তিতে আমাদের যোগ্যতা পড়াশোনা করে এবং ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার মত নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মকাণ্ড জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্যদের এবং নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
সেই পত্রে তারা আরও উল্লেখ করেন, আমরা সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও তাই সম্মানের সাথেই বাঁচতে চাই। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্য নামধারী কতিপয় সদস্যের মনগড়া, বানোয়াট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রূপকথার গল্প ও ভিত্তিহীন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে তারা আমাদেরসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজের সম্মানহানি করা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আজ দুপুরে চিঠিটা পেয়েছি। ওখনো কী লেখা আছে তা আমি খুলে দেখিনি।'
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন