একটা সময় ছিল যখন কোনও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কথা মনে করতেই আমাদের চোখের সামনে শত শত শিক্ষার্থীর কলতানে মুখর একটি প্রাঙ্গণের চিত্র ফুটে উঠতো, যেখানে একদল শিক্ষার্থী ক্যান্টিনে আড্ডা দিচ্ছে, অন্যদল গানে গুঞ্জন তুলছে এবং আরেক দল লাইব্রেরিতে বসে বইয়ের পাতায় বুঁদ হয়ে আছে।
অন্যদিকে, কেউ আবার ক্লাশরুমে বসে গভীর মনোযোগে ক্লাস লেকচার টুকছে। আবার কেউবা সিঁড়ির গোড়ায় বন্ধুর সাথে গল্পে মগ্ন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পুরো ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখতো তারা। আর এসবের কোনোটাই খুব বেশি দিন আগের বা পুরনো স্মৃতি নয়, মাত্র মাস সাতেক আগের কথা। তবুও এখন যেন সব স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। করোনার আতঙ্কে ক্যাম্পাসগুলো যেন ধূসর প্রান্তরে পরিণত হয়েছে।
গতবছর নির্দিষ্ট কিছু বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পূর্বাচলের মনোরম পরিবেশে নিজস্ব ক্যাম্পাসে ক্লাশ এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এসইউবি)। ধানমন্ডি ও কলাবাগানে দু'টি ক্যাম্পাস এবং নতুন করে পূর্বাচলে স্থায়ী ক্যাম্পাস সব মিলিয়ে জোরেশোরে চলছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম। কিন্তু করোনার প্রকোপে ছন্দপতন হয়েছে এই সবকিছুরই। তবে সাময়িক বিপত্তিতে পড়লেও বর্তমান পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় এসইউবি’র নামও রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন যেন রূপান্তরিত হয়েছে অনলাইনে। শুরুতে কিছুটা হিমশিম খেলেও এখন বেশ তালে তাল মিলিয়ে চলছে ক্লাসসহ এর অন্যান্য কার্যক্রম।
ক্লাস এবং পরীক্ষার যথাযথ মূল্যায়ন ও স্বচ্ছ্বতা নিশ্চিতকরণে ইউজিসি কর্তৃক প্রদত্ত নিয়ম অনুসরণ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকেরা। প্রতিটি কোর্সে লিখিত এসাইনমেন্টের পাশাপাশি মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছেন তারা। এছাড়া ক্লাশটেস্টের জন্য অনলাইনভিত্তিক এমসিকিউ পরীক্ষা এবং উপস্থাপনা সবই চলছে পালাক্রমে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সহযোগিতাও লক্ষ্য করার মতো। এছাড়া বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং এবং মানসিক সহায়তা প্রদান এসবও মুঠোফোনের মাধ্যমে অব্যাহত রয়েছে।
একাডেমিক ক্লাসের পাশাপাশি বাইরের জগতের সাথে পরিচিতি গড়ে তোলা এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ প্রতি মাসেই বিভিন্ন সেমিনার এবং ওয়ার্কশপের আয়োজন করে থাকে। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায়ও এর ধারাবাহিকতায় কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। সকল শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রতি সপ্তাহেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে থাকছে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ওয়েবিনার। এতে বিশেষজ্ঞ অতিথি হিসেবে থাকছেন নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের সফল দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গ। আয়োজনগুলো অনলাইনে হওয়ার দরুন দেশের এবং বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তরের খ্যাতনামা এ সকল ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানানো সহজতর হচ্ছে বলেই এর আয়োজকদের মতামত।
শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠন ও অন্যবিধ পাঠসহায়ক সম্পূরক কার্যক্রম। অনলাইনে পড়াশুনোর পাশাপাশি চলমান রয়েছে এসব ক্লাবকার্যক্রমও। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির বিতর্ক সংগঠন এসইউবি ডিবেটিং সোসাইটি বিতর্ক কেন্দ্রিক কর্মশালা এবং অনলাইনে প্রীতি বিতর্ক আয়োজন করে। সেইসাথে এসইউবি কালচারাল ক্লাব আয়োজন করছে অনলাইনভিত্তিক গান ও কবিতার আসর।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং সুবিধার কথা মাথায় রেখে নিবন্ধন এবং টিউশন ফি জমা দেয়ার ক্ষেত্রেও অনলাইন ব্যবস্থা চালু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সেই সাথে দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক সুবিধা নিশ্চিতকরণে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সীমিত পরিসরে খোলা রয়েছে এর বেশ কিছু কার্যালয়। এমনকি বর্তমানে এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও নতুন সেশনে শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শিক্ষার্থীদের আর্থিক সংকটের কথা বিবেচনা করে টিউশন ফি ২০-৩০% মওকুফ করেছে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া পূর্বাচলস্থ স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য রয়েছে ৫০% ওয়েবার। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও নেয়া হচ্ছে না কোনো বাড়তি ফি বা জরিমানা। আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছ আলী আহমেদ ভূঁইয়া ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ। বাঁধা বিপত্তির মুখে থেমে না থেকে সময়ের সাথে অভিযোজিত হয়ে এভাবেই এগিয়ে চলছে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। প্রযুক্তির কল্যাণে হাজার মাইলের দূরত্ব ঘোঁচাতে পারলেও সুস্থ শহরে প্রিয় প্রাঙ্গণে ফেরার দিন গুনছে প্রতিটি হৃদয়।
লেখক: চৌধুরী মাহরীন তাসনিম
শিক্ষার্থী, খাদ্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিভাগ
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ