৬ মে, ২০২১ ২১:৩৯

আবর্জনা থেকে সাত ধরনের জৈব পণ্য উৎপাদন ঢাবির দুই শিক্ষার্থীর

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

আবর্জনা থেকে সাত ধরনের জৈব পণ্য উৎপাদন ঢাবির দুই শিক্ষার্থীর

ঢাকা শহরে হাঁটাচলার সময় রাস্তার পাশে স্তুপ করা ময়লার গন্ধে নাক চেপে ধরেননি এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। চরম অস্বস্তিকর আর পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই বর্জ্য থেকেই জ্বালানি তেল, গ্যাস, বায়ো-ফুয়েল ও জৈবসারসহ নানা রাসায়নিক পণ্য উৎপাদন করতে পেরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। 

বিদ্যমান প্রযুক্তিতে তৈরি তাদের প্লান্টে উৎপাদিত এসব পণ্য বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে সরবরাহ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগে অধ্যয়নরত দুই তরুণ গবেষক এইচএম রঞ্জু ও পিযুষ দত্ত। 

এ জন্য নিজস্ব এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে রাজধানীর মাতুয়াইলের তুষারধারায় পরীক্ষামূলক প্লান্টও স্থাপন করেছেন তারা। 

কীভাবে কাজ করে এই প্লান্ট-এ বিষয়ে রঞ্জু জানান, আমরা মূলত গৃহস্থালির বর্জ্য নিয়ে কাজ করছি। বর্জ্য সংগ্রহের পর আমাদের প্লান্টের সেপারেশন সিস্টেমের মাধ্যমে জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা করা হয়। এরপর ‘হিট ও কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টে’র মাধ্যমে জৈব বর্জ্য থেকে বায়োফুয়েল, ড্রাই-আইস, দানাদার ও তরল জৈব সার উৎপাদন করা হয়। এক কেজি জৈব বর্জ্যের পচনশীল অংশ থেকে প্রায় ৮ ভাগ বায়ো-ফুয়েল, ৭ ভাগ ড্রাই-আইস এবং ২৪ ভাগ জৈব সার উৎপাদন সম্ভব সম্ভব। উল্লেখ্য, বায়ো-ফুয়েল বিভিন্ন দেশে জ্বালানি তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। শীতলীকরণের প্রয়োজন হয়, এমন কারখানায় এবং খাদ্য সংরক্ষণে ড্রাই-আইস ব্যবহৃত হয়। আর মাটি ছাড়াই চাষ ব্যবস্থায় তরল জৈব সার ব্যবহার করা হয়।

অন্যদিকে, অজৈব বা প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল, পেট্রোলিয়াম গ্যাস, এক্টিভেটেড কার্বন উৎপাদন করা হয়। 

রঞ্জু জানান, তাদের প্লান্টে ১ কেজি প্লাস্টিক থেকে ৭০০ গ্রাম জ্বালানি তেল, ১০০ গ্রাম পেট্রোলিয়াম গ্যাস এবং ২০০ গ্রাম এক্টিভেটেড কার্বন উৎপাদন করা যায়। উৎপাদিত জ্বালানি তেল ডিজেল ইঞ্জিন, পেট্রোল ইঞ্জিন ও  জেনোরেটর চালনা করা, পেট্রোলিয়াম গ্যাস দিয়ে রান্নাবান্নার কাজ আর এক্টিভেটেড কার্বন থেকে পানিসহ নানা পদার্থ বিশুদ্ধকরণ এবং কালি তৈরিসহ নানান কাজে ব্যবহার করা যাবে। 

এইএম রঞ্জু বলেন, অন্যান্য প্লান্টে শুধু বায়োগ্যাস ও জৈবসার উৎপাদনে যেখানে অনেক সময় লেগে যায়, সেখানে আমরা প্রতিদিনের বর্জ্য প্রতিদিনই প্রক্রিয়াজাত করে উৎপাদন করতে পারবো। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যুক্ত করে এখান থেকে বিদ্যুৎ ও ইউরিয়া সারও উৎপাদন করা সম্ভব। পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পাওয়া গেলে এই প্রকল্প বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।

পুরো প্রকল্পে উপদেষ্টা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তসলিম-উর-রশিদ, প্রভাষক সাজেদুর রহমান এবং বাংলাদেশ অ্যাডভান্স রোবটিক্স রিসার্চ সেন্টারের সিইও জিমি মজুমদার। 

সাজেদুর রহমান বলেন, আমরা এই প্রকল্পে তাত্ত্বিক ও প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে সাহায্য করেছি। এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত যেসব পণ্য উৎপাদন হচ্ছে, আমাদের বিশ্লেষণে তার মান ভালো। ঢাকা শহরে যেহেতু প্রতিদিন প্রচুর বর্জ্য তৈরি হয়, যেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে কাজে লাগানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এ প্রকল্প বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করা গেলে তা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর