‘দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে। তারা যেন দেশের সুনাগরিক হয়। আলোকিত, শিক্ষিত প্রজন্ম যখন আমরা গড়ে তুলতে পারবো, তখন তারা মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে। তাদের মধ্যে যখন জ্ঞানের প্রকৃত আলো দিতে পারবো, তখনই আগামী প্রজন্ম নিজেদের মধ্যে শক্তি খুঁজে পাবে।’
সোমবার বিকেলে অনলাইন প্লাটফর্ম জুম অ্যাপের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (সিইডিপি) অধীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত বিষয়ভিক্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণের ১৮ ও ১৯তম ব্যাচের সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ এসব কথা বলেন।
শিক্ষক প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, ‘কলেজগুলোর শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা সত্যিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকালকার সময়ের জন্য আইসিটি দক্ষতা খুব বেশি জরুরি। সেটি এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও বিস্তৃত হবে।’
প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মূল কাজ নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের তৃষ্ণা জাগিয়ে তোলা। এটি খুব বেশি জরুরি। কারণ এখন আর জ্ঞানের উৎস কেবলই শিক্ষক নন। আরও অনেক উৎস আছে। বর্তমান সময়ে একজন শিক্ষকের ভূমিকা এখন অনেক বেশি গাইড বা ফেসিলিটিটর হিসেবে। আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন নিয়ে আসা দরকার। এখন দ্রুত বিশ্ব পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে কমিউনিকেশনস স্কিলস, টিম বিল্ডিং, সফ্ট স্কিলস, ভ্যালুজ-এসব শেখাতে হবে। শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি নিয়ে বের হওয়ার চেয়ে বেশি দরকার তারা কর্মদক্ষতা নিয়ে বের হচ্ছে কিনা সেটি দেখা। তারা লেখা-পড়া শেষ করে আনন্দময় অভিজ্ঞতা নিয়ে বের হচ্ছে কিনা সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা একটা ভিশন নিয়ে কাজ করছি। আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী চলছে। বাংলাদেশে যদি ১৫ আগস্ট না ঘটতো, দেশ সামরিক শাসনের দিকে না যেতো, তাহলে আজকে অর্থনৈতিক ও সামাজিত সূচকে আমরা কোথায় যাবো-এসব নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন হতো না। আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনা, স্বপ্ন, পরিকল্পনা, বাজেট প্রণয়নে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়ার যেসব সিদ্ধান্ত ছিল- সেইসব ধারাবাহিকতাগুলো অক্ষুন্ন রাখতে পারতাম, তাহলে ২০২২ সালে এসে আমার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কোন দিকে যাচ্ছে সেটি আমাদের মুখ্য বিষয় থাকতো না। আজকে আমরা উন্নত, মানবিক জায়গায় বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠ, আদর্শনিষ্ঠ জাতিরাষ্ট্রে পরিণত হতাম।’
শিক্ষক প্রশিক্ষণ একসঙ্গে ২টি ব্যাচের ৮টি বিষয়ের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গত ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়। এই প্রশিক্ষণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের মোট ৪৬২ জন শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন।
২৮ দিনব্যাপী চলা প্রশিক্ষণের সোমবার ছিল সমাপনী দিন। এই সমাপনী অনুষ্ঠানে স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য স্থপতি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার, সিইডিপির প্রকল্প পরিচালক ড. এ কে এম মুখলেছুর রহমান। ১৯তম ব্যাচের মার্কেটিং এর কোর্স উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কোর্স উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. শারমিন মুসা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের কোর্স উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার, দর্শন বিভাগের কোর্স উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মো. নুরুজ্জামান, ১৮তম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের কোর্স উপদেষ্টা ইউজিসি অধ্যাপক ড. ফখরুল আলম, ইতিহাস বিভাগের কোর্স উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশা ইসলাম নাঈম, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কোর্স উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক মো. সেলিম ভুঁইয়া, মনোবিজ্ঞান বিভাগের কোর্স উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক প্রশিক্ষণ দপ্তরের পরিচালক মো. হাছানুর রহমান।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন