জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃষ্টির সময় শহীদ রফিক-জব্বার হলের ছাদ থেকে পড়ে অমিত কুমার বিশ্বাস নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটনায় পাওয়া গেছে নতুন তথ্য। রাত সাড়ে নয়টায় অমিতের রুমমেটের কাছে পাওয়া এক চিরকুট থেকে জানা গেছে আত্মহত্যা করেছেন এই শিক্ষার্থী। অমিতের বন্ধুরা চিরকুটের হাতের লেখা দেখে নিশ্চিত করেছেন এটি অমিতেরই লেখা 'সুইসাইড নোট'।
পূর্বের খবর - বৃষ্টিতে ভিজতে হলের ছাদে, পা পিছলে জাবি ছাত্রের মৃত্যু
অমিতের বিছানার চাদরের নিচে পাওয়া চিরকুটে লেখা ছিলো, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। আমার মস্তিষ্কই আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী। আমি নিজেই নিজের শত্রু হয়ে পড়েছি অজান্তেই। নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে আমি ক্লান্ত। আর না। এবার মুক্তি চাই। প্রিয় মা বাবা ছোটবোন পারলে সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও।- অমিত।’
মঙ্গলবার দুপুর আড়াই টার দিকে ছাদ থেকে পড়ে আহত হওয়ার পর সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অমিতকে। বিকাল সাড়ে ৫ টায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) দায়িত্বরত চিকিৎসক ড. ইফরান জানান, ইন্টারনাল ব্লিডিং ও মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণে তার মৃত্যু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অমিত শহীদ রফিক জব্বার হলের ৩১৫ নম্বর কক্ষের আবাসিক। তারা গ্রামের বাড়ি খুলনায়। বাবা অজয় কুমার বিশ্বাস বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে কর্মরত আছেন। অমিত পরিবারের একমাত্র সন্তান
প্রত্যক্ষদর্শী পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান হৃদয় বলেন, আমি তিন তলায় থাকা অবস্থায় ভারি কিছু ছাদ থেকে পড়ার শব্দ শুনি। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে অমিতকে পড়ে থাকতে দেখে সাথে সাথে হলের কিছু ছাত্রদের সহায়তায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে নিয়ে আসি। সেখান থেকে তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অমিতের রুমমেট, একই বিভাগের শিক্ষার্থী রবিন ঘোষ (উদ্ভিদ বিজ্ঞান-৪৫) বলেন, অমিত খুবই ভালো ছেলে। তার কোনো ধরনের হতাশা ছিল না। ও নিয়মিত মেডিটেশন করত। তবে ইদানিং একটু অসুস্থ ছিল। এছাড়া কোন ধরনের সমস্যা ছিল না। আজকে দুপুরে আমরা বন্ধুরা মিলে একসাথেই খাবার খেয়েছি। অমিতও আমাদের সাথে ছিল। পরে সে হলে চলে আসে। কিছুক্ষণ পর শুনি সে ছাদ থেকে পড়ে গেছে।
শহীদ রফিক জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ঘটনা শুনে আমি তাৎক্ষণিক এনাম মেডেকেলের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাই। আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছি। কিন্তু আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাড়িতে করে তাকে খুলনায় তার গ্রামের বাড়িতে পাঠাব। তার সাথে সহপাঠীরাও যাবে।
অমিতের বাবা অজয় কুমার বিশ্বাস জানান, পারিবারিক কোনো ঝামেলা ছিল না। গত ৭ তারিখই ছেলেকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছেন ক্যাম্পাসের উদ্দেশে। তেমন কোনো মনোমালিন্যও হয়নি পরিবারের সাথে। দুপুরেও রুমমেটের সাথে হলের পাশের দোকানে খাওয়া-দাওয়া করেছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল