চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকবৃন্দ আলোচনা করেছেন। দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি, গণতন্ত্রের স্বরূপ, মানবাধিকার এবং উন্নয়নসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বুধবার (৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সেমিনার কক্ষে অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যা পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ -উদ-দৌলাহ বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বাধ্যতামূলক করার কোনো বিকল্প নেই৷ আমাদেরকে বঙ্গবন্ধু এবং রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে এক করে ভাবলে চলবে না।
অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, অর্থনীতির উন্নয়ন বলতে আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি। তবে আমাদের দেখতে হবে দারিদ্র্যতার হার কত, বেকারত্বের হার ৫.৩ শতাংশ যা ১৯৯৫ এর তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। অসাম্যতা একটি বড় বিষয় আমাদের অর্থনীতিতে যার ফলে অনেক সমস্যার উদ্ভব। এছাড়াও আমাদের ঋণের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। এটা জিডিপির তুলনায় কত শতাংশ তা দেখতে হবে, যা ৪৬ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করলে আমরা আসলে পরাধীনতা থেকে মুক্তি পাইনি। আমাদের মুদ্রাস্ফীতি বরাবরের মতোই উর্ধ্বে যাচ্ছে।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম বলেন, প্লেটো একটি কথা বলেছিলেন, আপনি যা দেখছেন তা সত্য নয়, যাকে ভিক্টিম দেখছেন সে হয়তো আক্রমণকারী এবং যাকে আক্রমণকারী দেখছেন সে ভিক্টিম হতে পারে। এজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অর্থনীতির দৃষ্টিতে যা সত্য রাজনীতির দৃষ্টিতে তা ভিন্নও হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, মানবাধিকারের সাথে গণতন্ত্রের সম্পর্ক ইতিবাচক। তাই উন্নয়ন বলতে আমাদের মনে করা উচিত মনের কথাগুলো বাধাহীনভাবে বলতে পারার পরিবেশ থাকা। কিন্তু উন্নয়নের কথা বলে মানবাধিকার হরণ করা উচিত নয়। গ্লোবাল সাউথ হচ্ছে উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশ। যেখানে এই মানবাধিকার এবং লিবারেল ডেমোক্রেসির সম্পর্ক নেতিবাচক হয়ে উঠেছে। যেহেতু ডেমোক্রেসি একটি বিমূর্ত ধারণা, এটি নিজে নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাই আমাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা এবং ব্যক্তি ও সমষ্টির দাসত্ব করা থেকে বের হতে হবে। এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতি নিয়ে রাজনীতির অধ্যাপক ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত এবং মায়ানমারের পার্শ্ববর্তী একটি জায়গা। এছাড়াও এটি ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চল হওয়ায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলের রাজনীতিতে বৈচিত্র্য রয়েছে।
দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি নিয়ে রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মো. ইয়াহিয়া আক্তার বলেন, আমি দেশকে ভালোবাসি বলে কিছু বিষয় বলতে চাই। ১১ টি নির্বাচন আমরা করেছি যেখানে শুধুমাত্র তিনটি নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলা যায়। সেগুলো হলো পঞ্চম, সপ্তম এবং অষ্টম জাতীয় নির্বাচন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বাকি নির্বাচনগুলোও গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারতো।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা