'দ্য অনলি অপশন ইজ রেড টেরর'- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসুর এই ফেইসবুক স্ট্যাটাসের পর পরই বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ক্যাম্পাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার মধ্যরাতে ঢাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়ে মেঘমল্লার বসুকে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহিন সরকার।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মাহিন সরকার বলেন, আমরা যখন ক্যাম্পাসে এসেছি সন্ত্রাসীরা একমাত্র এসব বামদের জায়গা করে দিয়েছে। জুলাইয়ের মতো একটি বিপ্লবের পর এখনো দেখছি তারা আওয়ামী ন্যারেটিভকে শক্তিশালী করতে চায়। আমরা দেখি উদ্যানের গেট বন্ধের পর কারা মব করেছে। কারা প্রক্টরের সাথে বাজে ব্যবহার করেছে। এদের অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এদের গ্রেফতার করতে হবে।
এর আগে, শুক্রবার রাতে, 'লাল সন্ত্রাসই একমাত্র উপায়'- লিখে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন মেঘমল্লার বসু। যেখানে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের ইঙ্গিত দেন।
ইংরেজি সেই ফেইসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, 'একমাত্র বিকল্প লাল সন্ত্রাস। প্রান্তিক মানুষের স্বার্থে প্রতিরক্ষামূলক সহিংসতা। আমরা জাগরণ এবং মিছিল করি যার সহিংস হওয়ার ক্ষমতা নেই। তা দ্বারা আপনি কখনই আপনার কমরেডদের রক্ষা করতে পারবেন না। মানুষ আপনাকে পছন্দ করবেন ঠিকই, কিন্তু কেউ অনুপ্রাণিত হবে না। কারোরই আর 'মুক্তমনা' পার্টির দরকার নেই। শহীদদের কেউ পরোয়া করে না। ফ্যাসিবাদ তখনই ভালো যখন সে মৃত।'
তিনি ডানপন্থাকে ইঙ্গিত করে আরও লেখেন, 'এই ডানপন্থিদের পাগলামিতে আপনাকে সার্বভৌমত্বের নামে হত্যা করা হবে এবং আপনার চরিত্রকে হত্যা করা হবে। মুক্তমনা এবং 'কেন্দ্রবাদী' যারা তাদের হৃদয় তারা ডানপন্থার কাছে বিক্রি করেছে। তারা দাবি করবে এটি একটি সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এবং উভয় পক্ষই কতটা খারাপ। আপনাদের খুব কম বন্ধুই আছে। এমনকি একজনকেও হারানোর সামর্থ্য আপনাদের আর নেই। আর মানুষ ভেড়ার মত। আপনি কি আজীবন মেষপালক হতে ইচ্ছুক?'
গুপ্ত রাজনীতির দিকে ইঙ্গিত করে মেঘমল্লার বসু লেখেন, 'প্রকাশ্য বিক্ষোভ করা বন্ধ করুন। প্রকাশ্যে কমিটি দেওয়া বন্ধ করুন। আমরা সতর্ক না হলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব। দাঁত ও নখর বেরিয়ে আসছে। এভাবেই আপনার পথকে আপনি ব্যঙ্গ বিদ্রুপ থেকে বাঁচাতে পারবেন। আসুন এটিকে আমাদের গুপ্ত বন্ধুদের কাছে নিয়ে যাই। আমাদের সাথেই থাকুন।'
যদিও ওই পোস্ট কিছুক্ষণের মধ্যেই ডিলিট করে দেন।
কিন্তু এ ঘটনায় রাত ১২.৩০ মিনিটের দিকে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। হল পাড়া থেকে মিছিল নিয়ে তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমবেত হন। এ সময় 'লাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন', 'সন্ত্রাসীদের ঠিকানা এই ক্যাম্পাসে হবে না' ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির একটি দেয়ালে ছাত্র ইউনিয়নের করা সিরাজ শিকদারের গ্রাফিতি মুছে দিয়ে জঙ্গি বসু লিখে দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, এরা ৮০ ও ৯০ এর দশকের মতো আবারও সন্ত্রাসবাদ কায়েম করতে চায়। তারা ডাকসুকে এভাবেই ভন্ডুল করেছিল ৯০ এর দশকে। আজ ওই সন্ত্রাসীরা আবারও সন্ত্রাসবাদের ঘোষণা দিচ্ছে। এই সন্ত্রাসীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতেই হবে।
আরেক শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের বলেন, আমরা আজকের এই প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ থেকে বলতে চাই... এটি সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। তাদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।
আজিজুল হক নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, এই সংগঠন আওয়ামী লীগের বি টিম হিসাবে কাজ করেছে। ছাত্রলীগ সব সংগঠনকে দমন করেছে, কিন্তু এদের জায়গা দিয়েছে। নতুন এই বাংলাদেশে বলতে চাই, নতুন করে কাউকে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে দেওয়া হবে না।
বিডি প্রতিদিন/কেএ