শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় ছয়জনকে অভিযুক্ত করে মামলার অভিযোগপত্র প্রস্তুত করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। বুধবার বিকেল মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিংয়ে এমন তথ্য জানিয়েছেন কমিশনার গোলাম কিবরিয়া।
অভিযুক্ত ছয়জন হলেন- সুনামগঞ্জের দিরাই থানার কালিয়াকাপনের ফয়জুল হাসান ফয়েজ, তার বন্ধু সুনামগঞ্জের দিরাই থানার উমেদনগর গ্রামের সাদেকুর রহমানের ছেলে সোহাগ মিয়া, ফয়জুলের বাবা আতিকুর রহমান, মা মিনারা বেগম, মামা ফজলুর রহমান ও ভাই এনামুল হাসান।
পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে ফয়জুলকে একটি ৮ জিবি মেমোরি কার্ড দেয় তার বন্ধু সোহাগ। ওই মেমোরি কার্ড থেকে জসিম উদ্দিন রাহমানী, তামিম উল আদনানী এবং অলিপুরী হুজুরের ওয়াজ শুনে ফয়জুল জিহাদের ব্যাপারে প্রভাবিত হয়। জসিম উদ্দিন রাহমানীর লেখা উন্মুক্ত তরবারি বইটি পড়ে এবং তিতুমীর মিডিয়ার ভিডিও দেখে ফয়জুল ধারণা করে, জাফর ইকবাল একজন নাস্তিক। দাওয়াহ-ইলাল্লাহ নামক ওয়েবসাইটে সে জাফর ইকবালের ভূতের বাচ্চা সোলায়মান বইয়ের ছবি দেখে এবং সেখানে বিভিন্ন মন্তব্য দেখে ধারণা করে, নবী সোলায়ামান (আ.)-কে কটাক্ষ করে এ বইটি লিখা হয়েছে। তখন সে জাফর ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এ উদ্দেশ্যে সে ছুরি কিনে এবং তিন-চার মাস ধরে জাফর ইকবালকে হত্যার সুযোগ খুঁজতে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার বিভিন্ন স্থিরচিত্র, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, মোবাইল কললিস্ট ও অন্যান্য প্রমাণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা গেছে, ফয়জুল নিজেই জাফর ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা ও হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয়া হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, গত ৩ মার্চ বিকালে শাবিতে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ আয়োজিত ‘ইইই ফেস্টিভ্যাল’ চলাকালে মঞ্চে বসে থাকা জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়। মাথার পেছনদিকে ও শরীরের কয়েক স্থানে ছুরিকাঘাত করা হয় তাকে। আহত জাফর ইকবালকে প্রথমে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, পরে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে নগরীর জালালাবাদ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ফয়জুল হাসানকে প্রধান আসামি করে আরো কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
এদিকে ঘটনার পরপরই পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা হামলাকারী ফয়জুল হাসানাকে আটক করেছিলেন। গণপিটুনিতে আহত হওয়ার পর তাকে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে পুলিশ পৃথকভাবে ফয়জুলের বাবা, মা, ভাই, মামা ও বন্ধুকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়। রিমান্ড শেষে আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠান।
বিডি প্রতিদিন/২৫ জুলাই ২০১৮/হিমেল