১৪ নভেম্বর, ২০১৯ ১৯:০৮

গাজীপুরের অপহৃত শিশু সিলেটে উদ্ধার, স্ট্যাম্পে ধর্ষণের অনুমতি!

সিলেট ব্যুরো

গাজীপুরের অপহৃত শিশু সিলেটে উদ্ধার, স্ট্যাম্পে ধর্ষণের অনুমতি!

রিক্তা (ছদ্মনাম)। ১০ বছর বয়সের শিশু কন্যা। ১৩ দিন আগে গাজীপুরের চান্দুরা চৌরাস্তা এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করেছিল দুর্বৃত্তরা। 

বুধবার র‍্যাবের পাতানো ফাঁদে সিলেটে আটক হয় অপহরণকারী। এসময় উদ্ধার করা হয় অপহৃত রিক্তাকে (ছদ্মনাম)। মাত্র ২ লাখ টাকার জন্য রিক্তাকে অপহরণ করে যে কল্পকাহিনী করেছে অপহরণকারী তাহের আলী (২০) তার বিষদ বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে তুলে ধরেছেন র‌্যাবের এক কর্মকর্তা।

১০ বছর বয়সের এই শিশু কন্যা নিজের দেহের বিনিময়ে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। জীবন যৌবন বিলিয়ে দিয়ে সে তার ঋণ পরিশোধ করবে। টাকা পরিশোধের আগ পর্যন্ত সামাজিক-অসামাজিক, বৈধ-অবৈধ যত কাজ আমাকে করতে বলা হবে, তা করতে আমি বাধ্য থাকব, এমন চুক্তি করেছে রিক্তা! চুক্তিটি মুখের নয়। ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ধর্ষককে ধর্ষণের অনুমতি দিয়েছে সে। 

এমন অদ্ভুত চুক্তির কথা কখনো শুনেছেন কেউ? এ ধরনের চুক্তির কথা শুনলে গাঁ শিউরে উঠবে নিশ্চয়ই। না, রিক্তা এ ধরনের কোনো চুক্তি করেনি। অপহরণকারী নিজেই মিথ্যা বানোয়াট চুক্তি করে রিক্তার জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায় করে রেখেছিল।

র‍্যাব কর্মকর্তা (এএসপি) শামিম আনোয়ার তার নিজেরে ফেসবুকে রিক্তার অপহরণ কাহিনী নিয়ে যা লিখেছেন, তা পাঠকের কাছে তুলে ধরা হল:
 
চুক্তি স্বাক্ষর করে শিশু ধর্ষণ!

"আমার দেহের বিনিময়ে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিলাম। আমার যৌবন দিয়ে এই ঋণ শোধ করব। টাকা পরিশোধের আগ পর্যন্ত সামাজিক-অসামাজিক, বৈধ-অবৈধ যত কাজ আমাকে করতে বলা হবে, তা করতে আমি বাধ্য থাকব। এ বিষয়ে আদালতে সকল অভিযোগও অগ্রহণযোগ্য হবে।"

এটি একটি চুক্তির ভাষ্য। ধর্ষিতা পঞ্চাশ টাকার স্ট্যাম্পে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ধর্ষককে ধর্ষণের অনুমতি দিচ্ছেন-এমন অদ্ভুত চুক্তির কথা কখনো শুনেছেন? নজিরবিহীন এ চুক্তিনামার ১ম পক্ষ হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন অপহরণকারী ও ধর্ষক নিজে, আর ২য় পক্ষে রয়েছেন ধর্ষিতা, অপহৃত ১০ বছরের এক কন্যা শিশু। অপহরণ, ধর্ষণ ও শিশু পাচারের অপরাধ জায়েজ করতে অভূতপূর্ব-অকল্পনীয় এই কৌশলের আশ্রয় নেওয়া এক ভয়ঙ্কর অপরাধী বুধবার রাতে আমাদের জালে আটক হয়েছেন। আমরা উদ্ধার করেছি অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার এতিম শিশু রিক্তাকেও (ছদ্মনাম)।

বাবা মারা গেছেন, মা থেকেও নেই-যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন যাবত শয্যাশায়ী। নেই আর কোন ভাইবোনও। অসুস্থ মাকে দেখার জন্য হাসপাতালে যাওয়া আসার পথেই অশুভ চক্রের শকুন দৃষ্টিতে পড়ে নানীর আশ্রয়ে থাকা দশকূলে আশ্রয়হীন এতিম শিশুটি। অনেকদিনের পরিকল্পনার পর গত ৩১/১০/২০১৯ ইং সুকৌশলে নানীকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে গাজীপুর থেকে রিক্তাকে অপহরণ করেন তারা। অপহরণের পর দ্রুত স্থান ত্যাগ করে সেখান থেকে তাকে সিলেটে নিয়ে আসা হয় এবং দাবি করা হয় ২ লাখ টাকার মুক্তিপণ। ০৭/১১/২০১৯ তারিখে ভিক্টিমের নানী বাদী হয়ে গাজীপুর জেলার বাসন থানায় এ সংক্রান্তে একটি মামলা দায়ের করেন।

টাকা নিয়ে দরকষাকষির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি এড়ানোর জন্য তারা আবাসিক হোটেল, জঙ্গল ও বিভিন্ন আত্মীয়ের বাসা মিলিয়ে ক্রমাগত স্থানবদল করতে থাকে। এ সময় শিশুটিকে একাধিকবার জোরপূর্বক ধর্ষণও করা হয়। শিশুটির নানী বিভিন্ন বাসায় বুয়ার কাজ করেন। তার পক্ষে ২ লাখ টাকা পণ দিয়ে রিক্তাকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়- বুঝতে পেরে অপহরণকারীরা তাকে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে। এক লাখ টাকায় দরদামও চলছিল। কিন্তু তার আগেই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা অপহৃত শিশুকে উদ্ধারের পাশাপাশি অপহরণকারী চক্রের সদস্য তাহেরকে আটক করতে সক্ষম হই। আটকের পরও আসামি তাহের অনেকটা নির্বিকার। জোরপূর্বক আদায় করা রিক্তার স্বাক্ষরযুক্ত 'যৌবন দিয়ে ঋণ পরিশোধের' চুক্তিপত্র (!!!) তো আছেই।

প্রিয় রিক্তা, তোমার জীবনে যা ঘটে গেছে, তা তো আর ফেরত দিতে পারব না। তবে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, তোমার ফুলের মতো নিষ্পাপ-পবিত্র জীবনকে লণ্ডভণ্ড করে দেওয়া প্রতিজন অপরাধীকে আমরা বিচারের মুখোমুখি করব। শুভ প্রত্যাশা রইল-দুঃস্বপ্নের অধ্যায় ভুলে যেয়ে নতুন জীবন লাভ হয় যেন তোমার।


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর