সবুজে ঘেড়া প্রকৃতি। পাহাড়ের ভাজে ভাজে চায়ের বাগান। সমতলে লেবু, আনারস আর কলা গাছের সাড়ি। রয়েছে প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠা নানা জাতের গাছ-গাছালি। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এমনই সবুজে ঘেড়া পরিবেশে গড়ে তোলা হচ্ছে ভূমিহীন গৃহহীনদের সুখের ঠিকানা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় সরকারি খাস জমিতে প্রথম ধাপে শ্রীমঙ্গল উপলোয় ৩০০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া জেলার সদর উপজেলায় ৪৭৬টি, রাজনগরে ৯৮টি, কমলগঞ্জে ৮৫টি, কুলাউড়ায় ১১০টি ও বড়লেখা উপজেলার জন্য ৬টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাহাড় টিলা বেস্টিত মৌলভীবাজার জেলার ভূ-প্রকৃতিতে এই নকশায় ঘর তৈরী করা হলে তা হবে ঝুকিপূর্ণ। বিশেষ করে, সিলেট বিভাগ ভূমিকম্প প্রবন এলাকা থাকায় এসব অঞ্চলে ঝুঁকি আরো বেশী থেকে যায়। তাই অঞ্চল ভিত্তিক নকশা প্রনয়ন করে এসব ঘরগুলো নির্মাণ করলে উপকারভোগীরা এর সুফল পেত।
আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, নির্মাণাধীন এসব ঘরের আয়তন কম হওয়ায় একটি পরিবার বসবাস করা খুবই কষ্টকর হবে। জমির পরিমান বাড়িয়ে ঘরের আয়তন আরো বৃদ্ধি করা দরকার।
প্রকল্প বাস্তায়ন সংক্লিষ্টরাও মনে বলেন, উপকারভোগীরা এই প্রকল্পের সুফল পেতে হলে ঘরের আয়তন আরো বৃদ্ধি করতে হবে। একই সাথে বাড়াতে হবে নির্মাণ ব্যায়। তা না হলে ভেস্তে যাবে প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্দ্যোগ।
বর্তমান নকশা অনুযায়ী প্রতিটি পরিবারের জন্য দুই শতক জমিতে ২৮৫ বর্গফুট আয়তনের একটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। যার মধ্য রয়েছে দুটি বেড রোম। একটি রান্নাঘর। একটি টয়লেট ও একটি বারান্দা। প্রতি ঘরের নির্মাণ ব্যায় ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা।
সরজমিনে গত শনিবার উপজেলার বিষামনি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় খুব দ্রুত গতীতে এগিয়ে চলছে ঘর নির্মাণ কাজ। পাহাড়ের সমতলে সারিবদ্ধ ভাবে ২৭টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘরের ভীত তোলা হয়েছে মাত্র দেড় ফুট মাটির নীচ থেকে। ঘর নির্মাণে নেই রড়ের ব্যবহার। কক্ষের আয়তন এতই কম যে একটি খাট বিছানোর পর ভেতরে মানুষ চলাচলের আর কোন জায়গা থাকবে না। দুই কক্ষের মধ্যে পর্টিশনে নেই কোন দরজা। ছোট রান্না ঘর। আর টয়লেটে ঘুরে দাড়ানো জোঁ নেই।
এই এলাকার আহম্মদ উদ্দিন বলেন, নির্মাণাধীন গৃহগুলো মানুষের বাস যোগ্য নয়। কক্ষগুলো ছোট। মাটির নীচ থেকে ভীট তুলা হয়নি। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে ঘরে পানি ডুকে যাবে। জমিতে মাটি ভরাট করে রাস্তার সমান করা উচিৎ ছিল। তার পর ঘর বানালে মানুষের উপকার হত।
প্রকল্প বাস্তাবয়ন কমিটির সদস্য ও সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসীন। কিন্তু ঘরগুলো খুবই নাজুক। ঘরের আয়তন কম হওয়ায় যারা বসবাস করবে তাদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এতো ছোট ছোট কক্ষে কোনভাবেই একটি পরিবার বাস করতে পারবে না। সামান্য বরাদ্দ বাড়িয়ে যদি ২৪ ফুট বাই ২৪ ফুট ঘর তৈরী করা হতো তা হলে অনায়াসেই চার সদস্যর একটি পরিবার বসবাস করতে পারতো।
মেসার্স আঞ্জুম কনট্রাকশনের মালিক মো. আব্দুল আল মাকসুদ সাবিব বলেন, ‘আমাদের দেশের ভৌগলিক এলাকা সমান নয়, সব এলাকায় মাটির লেভেরও এক নয়। সারাদেশে এক সাইড প্লানে ঘর না বানিয়ে যদি স্থানীয় ভাবে নকশা করে ঘর নির্মাণ করা হয় তাহলে গৃহহীনরা এই প্রকল্পের সুফল পেত।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সারাদেশের ভূ-প্রকৃতি এক নয় এটা ঠিক। তবে আমাদেরকে যে ডিজাইন দেয়া হয়েছে সেটা আমরা পাল্টাতে পারবো না।’
প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মাহবুব আলম বলেন, আমরা সারা দেশের জন্য একই ডিজাইন করেছি। অঞ্চল ভিত্তিক আলাদা করিনি। আর ঘরগুলো এতো ছোট নয় বলে আমার মনে হচ্ছে। এখন প্রথম পর্যায়ের কাজ চলছে। আপনি যে বিষয়গুলো বলছেন পরবর্তীতে আমরা চিন্তা করে দেখবো।’
বিডি প্রতিদিন/হিমেল