উপমহাদেশের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকাভুক্ত বিপন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী জলজ প্রাণী ডলফিন মৃত্যুর অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছেন বিশেষজ্ঞ দল। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হালদারিভার গবেষণা ল্যাবরেটরি’তে একটি মৃত ডলফিনের পোস্টমর্টেম করে উদঘাটন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞ দল।
জানা যায়, গত বুধবার সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ টিম নিজেদের মধ্যে ডলফিন মৃত্যুর কারণসহ নানা বিষয়ে মতবিনিময় করেন। দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টাব্যাপী একটি মৃত ডলফিনের পোস্টমর্টেম প্রক্রিয়া শুরু করেন। পরে বিকেল ৪টার দিকে বিশেষজ্ঞ দল হালদা নদী সরেজমিন পরিদর্শন করেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পোস্টমর্টেমের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং হালদায় ডলফিন মৃত্যুর কারণ ও সুপারিশ প্রণয়ন কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, হালদারিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে মৃত একটি ডলফিন সংরক্ষণ করা হয়। গত বুধবার পোস্টমর্টেমের পর একটি ডলফিনের অংশ বিশেষের নমুনা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা নিজ নিজ কর্মস্থলে নিয়ে যান। সেখানে আরো পরীক্ষা শেষে ডলফিন মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’ হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর এ অধ্যাপক বলেন, ‘এ নদীতে ২০০ এর বেশি ডলফিন আছে। এর মধ্যে গত সাড়ে চার মাসে ১৮টি মারা যায়। যত্রতত্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় ড্রেজারের আঘাতজনিত কারণেই এগুলো মারা যাচ্ছে। তাছাড়া ভেসে উঠা একটি ডলফিনের শরীরে আঘাতের চিহ্নও দেখা গেছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এককভাবে হালদা নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও আমি বিষয়টি উপস্থাপন করেছি।’
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গত ২২ ফ্রেব্রুয়ারি ‘হালদার ডলফিন মারা যাওয়ার কারণ উদঘাটন ও পোস্টমর্টেম এবং সুপারিশমালা প্রণয়নে’র লক্ষ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুর নদী কেন্দ্রে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাসুদ হোসেন খানকে আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার মো. মুমিনুল হককে সদস্য সচিব এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, মৎস্য বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য বলা হয়। গত বুধবার অনুষ্ঠিত পোস্টমর্টেম প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩০ জন বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য মৃত ডলফিনের বিভিন্ন অংশ সংগ্রহ করে অধিকতর পরিক্ষার জন্য নিয়ে যান।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর গড়দুয়ারার গচ্ছাখালি খালের মাস্টার বাড়ির কালভার্টের নিচ থেকে প্রায় সাত ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রায় ১০০ কেজি ওজনের মৃত একটি ডলফিন উদ্ধার করা হয়। গত ৫ জানুয়ারি একই উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাস্টার বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় একটি মৃত ডলফিন পানিতে ভেসে ওঠে। গত ৩ জানুয়ারি গড়দুয়ারা সুইস গেইট এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় একটি মৃত ডলফিন। গত ১ ফেব্রুয়ারি এ নদী থেকে একটি ডলফিন উদ্ধার করা হয়। গত চার মাসে হালদা নদী থেকে ১৮টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার