কর্ণফুলী নদীর বুকে একটি নৌকা। এ নৌকায় তৈরি করা হয়েছে একটি মঞ্চ। মঞ্চে চিরায়ত বিনি সুতার মালা পড়ে নৃত্য করছেন তিনজন তরুণ-তরুণী। নদীর বুকে ঢেউয়ের তালে নাচছেন তারা। সঙ্গে শুদ্ধ নৃত্যের মত প্রাকৃতিক নদী কর্ণফুলীকেও শুদ্ধ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন তারা। নদীর বুকে এমন ব্যতিক্রমী নৃত্য উপস্থিত সকলকে কাছেই টানছে নদী ও প্রকৃতির।
কর্ণফুলী নদী রক্ষায় ‘বিনি সুতার মালা’ শীর্ষক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আজ সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থেকে শুরু হয়ে চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার ব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি একাডেমি এবং কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন। তিন দিনব্যাপী ‘সাম্পান খেলা ও চাঁটগাইয়া সংস্কৃতি মেলার’ প্রথম দিন ছিল ‘বিনি সুতার মালা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।
নদীর উভয় পাড়ের ৩০টি ঘাটে এবং নদীপারের জনবসতি ঘিরে আলোচনা, নাচ, গানের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীকে দখল-দূষণমুক্ত রাখতে নদী ব্যবহারকারীদের সচেতন করতেই এ আয়োজন করা হয়।
ভাসমান নৌযানে তৈরি মঞ্চে সদরঘাট, চরপাথরঘাটা, নয়াহাট, কালুরঘাট, বোয়ালখালী, লাম্বুরহাট, গোচরা বাজার, গোডাউন ঘাট, ইছাখালী ঘাট, গোদালাঘাট, চৌধুরী হাট, দোভাষী বাজারে আয়োজন করা হয় উপজাতীয় নাচ, আলোচনা, আঞ্চলিক গানের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়েটের প্রফেসর ড. স্বপন কুমার পালিত, বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি একাডেমির চেয়ারম্যান আলীউর রহমান, ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেড এর ব্রান্ডিং এবং কমিউনিকেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ আমান উল্লাহ চৌধুরী। কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের সভাপতিত্বে এবং সভাপতি এসএম পেয়ার আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভা উদ্বোধন করেন চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মেম্বার।
বক্তব্য রাখেন কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মির্জা মোহাম্মদ ইসমাইল, চরপাথরঘাটা সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাফর আহমদ, শিল্পী গীতা আচার্য, শিল্পী মিলন আচার্য, ইছানগর সগরঘাটা সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি আলী হায়দার, কর্ণফুলী নদী মাছ ও মালবাহী সমিতির সভাপতি মীর আহম্মদ, চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি জিন্নাত আলী প্রমুখ। নৃত্য পরিবেশন করেন পলিয়ন বোমাং ও তার দল।
চুয়েটের প্রফেসর ড. স্বপন কুমার পালিত বলেন, ‘কর্ণফুলী দখল ও দূষণে মানুষের চেয়ে নদী ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়ভার বেশি। নদীর মোহনা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত কর্ণফুলী নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তারা কখনো সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি। কর্ণফুলীতে নোঙর করা শত শত জাহাজের পোড়া তেল প্রতিনিয়ত নদীতে ফেলছে। তাছাড়া নগরের ৬৫ লাখ মানুষের সৃষ্ট বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে। এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ওয়াসা নীরব দর্শক। নদীর উভয় তীরের শতাধিক শিল্পকারখানা, বাজার, ঘাটের মাধ্যমে নদী দূষণ হচ্ছে। কর্ণফুলী রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন আরও জোরদার করার বিকল্প নেই। খরস্রোতা না হলে অনেক আগেই কর্ণফুলীকে বুড়িগঙ্গার ভাগ্য বরণ করতে হতো। কর্ণফুলীর জোয়ার-ভাটা রাসায়নিক ও মানুষ্য সৃষ্ট বর্জ্য সাগরে নিয়ে যাচ্ছে।’
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি একাডেমির চেয়ারম্যান আলীউর রহমান বলেন, ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের অব্যবস্থাপনা কর্ণফুলীর প্রাকৃতিক রূপ ও সৌন্দর্য নষ্ট করছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে কর্ণফুলীর উভয় তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ক্যাপিটাল ড্রেজিং বাস্তবায়ন না করলে জোরদার আন্দোলন করা হবে।’
বুধবার দ্বিতীয় দিন বেলা ১১টায় নগরীর অভয়মিত্র ঘাট থেকে সাম্পান শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় অভয়মিত্র ঘাট থেকে চরপাথরঘাটা সিডিএ মাঠে সাম্পান খেলা ও চাঁটগাইয়া সংস্কৃতিমেলা অনুষ্ঠিত হবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার