রমজানের ঈদে বাড়ি ফিরতে ট্রেনের অগ্রীম টিকেট ক্রয়ের ২য় দিনেও যাত্রীদের তেমন চাহিদা নেই চট্টগ্রামে। শনিবার ট্রেনে ঈদের ২য় দিনে ১১ জুনের অগ্রিম টিকেট বিক্রয় করেছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৯ ঘন্টায়ও সূর্বণা এক্সপ্রেস, তূর্ণানিশিতা ও সোনার বাংলাসহ বিভিন্ন ট্রেনের প্রায় ৪০ শতাংশ টিকেট কাউন্টারে রয়েছে।
সরেজমিনে দুপুরের পর থেকে চট্টগ্রামের প্রতিটি কাউন্টারেই যাত্রী শূন্য দেখা গেছে। তবে রবিবার ঈদের অগ্রীম টিকেটের চাহিদা কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানান রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ১০ ও ১১ জুনের অগ্রিম টিকেট নিতে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। রবিবার থেকে চট্টগ্রামে কিছুটা চাপ বাড়তে পারে। বিশেষ করে সরকারি-বেসরকারি তেমন কোন ছুটি নেই। তাই চাপও তেমন নেই। রমজানের শেষের ৬-৮ রোজায় টিকেটের চাপ দ্বিগুন হতে পারে বলেও জানান তিনি। একই কথা বললের চট্টগ্রাম রেলওয়ে ষ্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদও।
হাবিব ও আজমসহ সোনার বাংলা ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী বলেন, ব্যবসায়ীক কাজে ঢাকায় যাওয়ার জন্য ষ্টেশনে এসেছি। সকাল থেকেই লাইনে দাড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করেছি। তবে এখনও কোন ধরণের টিকেটের চাপ নেই। কয়েকদিন পড়েই ভীড় আরো বাড়বে। এবার নিরাপত্তাও জোরদার দেখা যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে জিআরপির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম শহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদের ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতিও রয়েছে। প্রতিদিন করা হচ্ছে চেকিংও। টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে সব বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র্যাবের সহযোগিতায় টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা ছাড়া জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাও করা হবে বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে ১০টি ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি চলমান রয়েছে। এসব ট্রেনে টিকেট আছে ৬ হাজার ৯৩৭টি। এর মধ্যে কাউন্টারে পাওয়া যাবে ৬৫ শতাংশ ও অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে ২৫ শতাংশ। অন্য ৫ শতাংশ ভিআইপি এবং স্টাফ কোটায় ৫ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে।। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অগ্রিম টিকেট বিক্রি কার্যক্রম চলবে।
প্রতি বছরের মতো চট্টগ্রাম থেকে এবারও আন্তঃনগর ট্রেন সুবর্ণ, তূর্ণা, গোধূলি, মেঘনা, মহানগর, সোনার বাংলা, পাহাড়ীকা, উদয়ন ও বিজয় এবং চট্টলা এক্সপ্রেস দেশেরে বিভিন্ন প্রান্তের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। এবারও ঈদে যথারীতি ১১-১৫ জুনের ট্রেনে টিকেটের চাহিদার ওপর নির্ভর করে এক্সট্রা বগি লাগানো হবে। স্লিপার হলে ১৮টি, এসি চেয়ার হলে ৫৫টি এবং শোভন চেয়ার হলে ৬০ সিট থাকবে প্রতি বগিতে।
একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। একজন যাত্রী একাধিক ট্রেনের ও ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির টিকেট নিতে পারবেন না। অগ্রিম টিকেট ফেরতযোগ্য নয়। সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা ট্রেনে আসন বিহীন টিকেট ইস্যু করা হবে না। অন্য ট্রেনগুলোতে যাত্রার দিন যাত্রীর অনুরোধে আসন বিহীন টিকেট ইস্যু করা হবে।
দেয়া হবে সাত জোড়া বিশেষ ট্রেনও। ট্রেনগুলোর মধ্যে আছে দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল চলবে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা, চাঁদপুর স্পেশাল-১ চলবে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম, চাঁদপুর স্পেশাল-২ চলবে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম, রাজশাহী স্পেশাল চলবে রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী, পার্বতীপুর স্পেশাল চলবে পার্বতীপুর-ঢাকা-পার্বতীপুর রুটে। সব বিশেষ ট্রেন ঈদের আগে ১৩, ১৪ ও ১৫ জুন ও ঈদের পর ১৮ থেকে ২৪ জুন চলাচল করবে। এ ছাড়াও শোলাকিয়া বিশেষ ট্রেন-১ চলবে ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার রুটে ও শোলাকিয়া বিশেষ ট্রেন-২ চলবে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে ঈদের দিন।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের পাঁচ দিন আগে ১১ জুন থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সব আন্তঃনগর ট্রেন সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও চলাচল করবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ঈদ-পূর্ব অগ্রিম টিকিট বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টা থেকে বিক্রি করা হবে। গত ১ ও ২ জুন বিক্রি করা হয়েছে ১০ ও ১১ জুন ট্রেন ভ্রমণের টিকিট। আজ ৩ জুন ১২ জুনের, ৪ জুন ১৩ জুনের, ৫ জুন ১৪ জুনের ও ৬ জুন ১৫ জুনের ট্রেন ভ্রমণের টিকিট বিক্রি করা হবে।
এ ছাড়া ঈদের পর ফেরার জন্য যাত্রীদের ভ্রমণের জন্য অগ্রিম টিকিট রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টা থেকে বিক্রি করা হবে ১০ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত। ১০ জুন বিক্রি হবে ১৯ জুনের, ১১ জুন ২০ জুনের, ১২ জুন ২১ জুনের, ১৩ জুন ২২ জুনের, ১৪ জুন ২৩ জুনের, ১৫ জুন ২৪ জুনের ট্রেন ভ্রমণের টিকিট বিক্রি করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর