দেশের অর্থনীতির হৃদস্পন্দন খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর ২০১৬ সালে বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক বন্দরগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিতি পায়। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে গত নয় বছরে ২৮ ধাপ উন্নীত হয়। বিশ্বের ১০০টি প্রধান বন্দরের তালিকায় এই বন্দরের স্থান এখন ৭০তম।
সক্ষমতার এই প্রবৃদ্ধিকে আরও আধুনিক ও গতিশীল করতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ‘ঈগলরেল কনটেইনার ট্রান্সপোর্ট’ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে কনটেইনার মুভমেন্টের পরিমাণ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।
এ লক্ষ্যে আমেরিকান কোম্পানি ‘ঈগলরেল’ এর কয়েকজন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে দুই দফা চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করে গেছেন। তারা ‘ঈগলরেল’র সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে ‘ঈগলরেল’ ব্যবহার সম্পর্কে যাচাই করতে আমেরিকার আরও একটি শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম আসবেন। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে ঈগলরেল চালুর পদক্ষেপ নেবেন। আমেরিকার এই কোম্পানি বিশ্বের উন্নত বন্দরগুলোতে এ প্রযুক্তি সরবরাহ করে থাকে। অনেকটা ক্যাবল কারের মতো ঈগলরেল অন্তত চল্লিশ-পঞ্চাশ ফুট উপরে স্টিল স্ট্রাকচারের ট্র্যাকে কনটেইনার স্থানান্তর করে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বে টার্মিনাল পর্যন্ত ঈগলরেলের দুইটি ট্র্যাক স্থাপনের চিন্তা-ভাবনা চলছে। এই দুইটি ট্র্যাক দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার বে টার্মিনালের ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। ওখান থেকে কনটেইনার সরবরাহ দেয়া হবে। বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডের ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ টিইইউএস কনটেইনার মুভমেন্ট করা যায়। ঈগলরেলে ঘণ্টায় কমপক্ষে তিনশ’ টিইইউএস কন্টেনার মুভমেন্ট করা যাবে বলে জানান সংশ্লিটরা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) মো. জাফর আলম, এটি খুবই ভালো একটি প্রকল্প। তবে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু প্রস্তুত, তাও ভেবে দেখা হবে। বে টার্মিনাল নির্মাণ হলে অবশ্যই ঈগলরেল ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তাও দেখা দেবে। দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে সরকারের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে। প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকার গ্রহণ করেছে ৩০ বছরব্যাপী মহাপরিকল্পনা, যেখানে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন প্রাধান্য পাবে।
চবক সূত্র জানায়, বন্দরে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং এর পরিমাণ বাৎসরিক ১২-১৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪ সালে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হয় ১৭ লাখ টিইইউএস, ২০১৫ সালে ২০ লাখ, ২০১৬ সালে ২৩ লাখ এবং ২০১৭ সালে তা ২৬ লাখে উন্নীত হয়েছে। চলতি ২০১৮ সালে ৩০ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডেলিং এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় বন্দরের সর্বস্তরে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে, সংস্কার করা হয়েছে পুরোনো বন্দর আইনেরও। সূচনা হয়েছে বন্দর অটোমেশন কার্যক্রম। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকার কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল ও বে টার্মিনাল নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। স্বয়ংক্রিয় কনটেইনার অপারেশন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সিটিএমএস এবং জাহাজ যাতায়াত ও বহির্নোঙ্গরে অবস্থানকালে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে আধুনিক ভিটিএমআইএস চালু করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে এ বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম