স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ৩ সেপ্টেম্বর জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয় ‘সিনিয়র কনসালটেন্ট ও জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে পদোন্নতির জন্য চিকিৎসকদের বায়োমেট্রিক প্রতিবেদন চাওয়া হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে প্রার্থীদের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও বিগত ৬ মাসের প্রতিবেদন ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে প্রেরণ করতে’ বলা হয়।
এ প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) কর্তৃপক্ষ ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে শতভাগ হাজিরা নিশ্চিতের নির্দেশনাও দেয়। কিন্তু সরকার সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা-এর বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
গত মঙ্গলবার রাতে বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার নিজস্ব কার্যালয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ সভা করে। বুধবার বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বাতিলে প্রতীকী আন্দোলন হিসেবে চিকিৎসকরা বায়োমেট্রিক হাজিরা প্রদান থেকে বিরতও থাকেন। এরই মধ্যে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বায়োমেট্রিক মেশিনের সংযোগ।
এ নিয়ে বুধবার দুপুরে চমেক ক্যাম্পাসে বিএমএ’র ব্যানারে কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে টাঙানো ফেস্টুনে লেখা আছে ‘পদোন্নতিতে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ক্যাডারে বায়োমেট্রিক হাজিরা চেয়ে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে যথা সময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় বায়োমেট্রিক হাজিরা বয়টক।’
জানা যায়, বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার পক্ষ থেকে সোমবার চমেক হাসপাতালের পরিচালক, চমেকের অধ্যক্ষ এবং সিভিল সার্জনকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, বুধবার কোনো চিকিৎসক বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা দেবেন না। আগের মতোই চিকিৎসকেরা সনাতন পদ্ধতিতে হাজিরা দিয়ে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকবেন। এরপর সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনা ঘটে। সংযোগ বিচ্ছিন্নের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে অবহিত করে হয়েছে বলে জানা যায়।
চমেক অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘চিকিৎসকদের কর্মস্থলে উপস্থিতির বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সকল চিকিৎসকের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা দেওয়ার মাধ্যমে শতভাগ উপস্থিতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ছয় মাস ধরে ছয়টি বায়োমেট্রিক মেশিনের মাধ্যমে এটি আমরা বাস্তবায়ন করে আসছি। কিন্তু গত মঙ্গলবার রাতে কে বা কারা বায়োমেট্রিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েছি। এখন আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় আছি।’
বিএমএ কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘বায়োমেট্রিক মেশিন সংযোগ বিচ্ছিন্নের বিষয়টি আমরা অবহিত আছি। তবে এটি আমাদের কেন্দ্রীয় কোনো কমসূচি ছিল না। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার আমাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেব।’
বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি মুজিবুল হক খাঁন বলেন, ‘স্বাস্থ্য ক্যাডারে পদোন্নতিতে বায়োমেট্রিক হাজিরার প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক করা হয়। অথচ অন্য কোনো ক্যাডার সার্ভিসে এ নিয়ম নেই। আমরা এ পদ্ধতির প্রতিবাদে গতকাল প্রতীকী আন্দোলন হিসেবে চিকিৎসকরা বায়োমেট্রিক হাজিরা দেননি। তবে হাসপাতালে কেউ বায়োমেট্রিক মেশিনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি।’
চমেক সূত্রে জানা যায়, গত ছয়মাস ধরে ছয়টি বায়োমেট্রিক মেশিনের মাধ্যমে কর্মস্থলে হাজিরা নিশ্চিত করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার, নার্স, ডেন্টাল সার্জন, কর্মকর্তা, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীসহ প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন কর্মরত আছেন। এর মধ্যে মেডিকেল অফিসার আছেন ২৬২ জন, নার্স ৮৯২ জন, ডেন্টাল সার্জন ৩ জন, মেডিকেল টেকনোশিয়ান ২৬ জন, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী ৪০৮ জন এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ৫৫ জন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার