সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও গণটিকা প্রদানের কার্যক্রম চলছে। শনিবার এই টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে নগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ভোগান্তির শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ।
নগরীর বালুছড়াসহ কয়েকটি কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন থাকলেও টিকার গাড়ি এক ঘণ্টা দেরিতে আসার অভিযোগ টিকা গ্রহীতাদের। ফলে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে টিকা কেন্দ্রগুলোতে সাধারণের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও দেরিতে টিকার গাড়ি আসায় বিশৃঙ্খলা-ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) এ কার্যক্রমের আওতায় ৪ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ।
শনিবার সকাল থেকেই চট্টগ্রাম নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১৪টি উপজেলায় টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। উপজেলাগুলোতে কিছুটা সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম হলেও নগরীর কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে অব্যবস্থাপনা। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ২০৫টি অস্থায়ী কেন্দ্রে একযোগে টিকা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া ১৭টি নিয়মিত কেন্দ্রেও টিকা দেয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। অন্যদিকে, উপজেলা পর্যায়েও প্রায় তিন শতাধিক কেন্দ্রে টিকা প্রদান করা হয়েছে।
স্থানীয় ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জালালাবাদ ওয়ার্ডের একটি অস্থায়ী টিকা কেন্দ্র রয়েছে। এই কেন্দ্রে সাধারণ মানুষ সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইনে থাকলেও গণটিকার গাড়ি পৌঁছেছে আরো এক ঘণ্টা পরে। এতে টিকাগ্রহণের জন্য হঠাৎ করে সাধারণ মানুষ লাইন ভেঙে হুমড়ি খেয়ে হয়ে পড়ে টিকার জন্য। এতেই নানা ধরনর বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলে নিরাপত্তায় থাকা বা চসিকের দায়িত্বশীল কেউই এসব ঠেকাতে পারেনি। টানা তিন থেকে ৪ ঘণ্টা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে লিডার্স স্কুল এন্ড কলেজ টিকা কেন্দ্রে।
টিকাগ্রহীতা অনেকেই বলছেন, সকাল থেকেই টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করতে থাকে টিকা প্রত্যাশীরা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। সময়মতো স্বাস্থ্যকর্মীরা কেন্দ্রে না আসায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষদের। তাছাড়া মোস্তফা হাকিম কলেজ কেন্দ্রে টিকাগ্রহণে ইচ্ছুক হাজারও নারী-পুরুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকদের। এছাড়া বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রের বাইরে সড়কে দেখা গেছে মানুষের লম্বা লাইন।
আবিদুর রহমান ও মিনহাজুল ইসলাম বলেন, আমরা সকাল ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভলান্টিয়াররা জানিয়েছে টিকার গাড়ি এখনও আসেনি। পরে ১০টার দিকে গাড়ি এসেছে। তবে এ বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সাহেদ ইকবাল বাবুকে একাধিকবার ফোনে চেষ্টা করেও পায়নি।
অন্যদিকে, বিভিন্ন টিকাদান কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। সকাল ১১টার দিকে কাজির দেউড়ি এলাকার অফিসার্স ক্লাব ও এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকায় গণটিকাদান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, যাদের জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয় পত্র নেই এবং বয়স ১২ থেকে ১৮ বছর। এমন যে কেউ রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই করোনা প্রতিরোধে টিকা নিয়েছে। সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে এ গণটিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, টিকা গ্রহীতারা থাকা পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম চলে। এক সঙ্গে টিকার বিষয়টি কিছুটা সাময়িক অসুবিধা হয়েছে। গণটিকা দেওয়ার কারণে সাময়িক জনবল সংকট তৈরি হয়েছে। তবে সকলকেই টিকা দেওয়া হবে। আমাদের কাছে যথেষ্ট টিকা মজুদ আছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, সকাল থেকেই সুন্দর পরিবেশে সাধারণ মানুষকে টিকা প্রদান করা হচ্ছে। আরো সময় বৃদ্ধি হয়েছে। সকলকেই টিকা দেয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন