প্রতিবারের মতো এবার ঈদেও ট্রেনের পরিবহনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে রেলওয়ে প্রশাসন। যাত্রী পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত কোচ মেরামতের কাজ চলছে রেলওয়ে পাহাড়তলী কারখানায়। জনবল সংকটের মধ্যেও এবার ঈদে প্রতিটি নতুন কোচ তৈরি করছে প্রায় ৫০টির উপরে। সে জন্য কারখানার শ্রমিকরা কেউ রং, কেউ বগি প্রস্তুতকরণ, কেউ ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ তৈরি, কেউ চাকা মেরামত, কেউ ওয়েল্ডিং আবার কেউ প্রতিটি কোচের সিট মেরামতের কাজ করছেন। এখানে রয়েছে নির্দিষ্ট টাইমের বাইরেও ওভারটাইম করার সুযোগ। ইতিমধ্যে ৪০টির মতো কোচ প্রস্তুত রয়েছে। বাকি কোচগুলো তৈরি বা প্রস্তুতিতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে কারখানায়। আগামী বুধবারের মধ্যেই বাকি সব কোচের কাজ শেষ হবে এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ট্রেনেই এসব কোচগুলো যাত্রী পরিবহনে যুক্ত হবে বলে রেলওয়ের দায়িত্বশীলরা জানান।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের প্রস্তুতির জন্য শ্রমিকরা কাজ করছে প্রতিটি শপেই। একেক কর্মচারি একেকটি কাজ করছেন। ট্রেন যাত্রীদের জন্য চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর কারখানায় ৫০টি অতিরিক্ত কোচ মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ৪০টি কোচ মেরামতের কাজ। ওয়ার্কশপে দিনরাত চলছে বগি মেরামতের কাজ। এবার বিভিন্ন ইয়ার্ডে পড়ে থাকা স্ক্র্যাপ ৫০টি বগি মেরামত করা হচ্ছে। পুরো কারখানা জুড়ে প্রায় ১৮টি শপে চলছে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ, কেউ কাটছেন প্লেট, আবার কেউ কেউ বগিতে লাগাচ্ছেন রং, আবার কেউ পরিমাপ করছেন। এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন পাহাড়তলী কারখানার শ্রমিকরা।
কারখানার প্রবীন এক শ্রমিক বলেন, ঈদের সময় বাড়তি কাজ পড়ে আমাদের উপর। এতে সবকিছু ভুলে যাত্রীসেবার জন্য কোচ তৈরির কাজে নিবেদিত হই। প্রায় বগি বা কোচের মেরামতের কাজ শেষের দিকে। এখান থেকে নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পর লাইনে পাঠানো হবে। দুই-একদিনের ভেতরে আমাদের গাড়িগুলো সম্পূর্ণ রেডি করে বের করে দিতে পারব। কারখানায় প্রায় ১৮টি শপের শ্রমিকরা কাজ করছেন। এখানে রাতদিন সমান তালে চলছে ট্রেনের বগি মেরামতের কাজ।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান যন্ত্র (সিএমই) প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার বোরহান উদ্দিন বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও প্রতিটি ট্রেনের নতুন কোচ সংযুক্ত হবে। পাহাড়তলী কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় দিন-রাত দম ফেলানোর সময় নেই শ্রমিকদের। শ্রমিকরাও কঠোরভাবে চেষ্টা করছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে কোচগুলোর কাজ শেষ করতে। তাছাড়া এবার প্রায় ট্রেনেই নতুন কোচ সংযোজন হয়েছে। এবার ঈদে যাত্রী চাহিদা বিবেচনা করে চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর, ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া রুটে ১০টি বিশেষ ট্রেন চলবে। যাত্রীরাও আরামদায়কভাবে ট্রেন ভ্রমণ করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কারখানার কর্মব্যবস্থাপক (নির্মাণ) রাশেদ লতিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৫০টি কোচ মেরামত করে ঈদের ট্রেনে যুক্ত করা। ইতিমধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো বুধবারের মধ্যে শেষ হলে নিশ্চিতভাবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হব বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা (সিসিএম) নাজমুল ইসলাম বলেন, এবার টিকিট কালোবাজারী ঠেকাতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গত ২৩ এপ্রিল থেকে ঈদের আগাম ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। অনলাইনে টিকিট থাকবে ৫০ শতাংশ। আর বাকি ৫০ শতাংশ থাকবে কাউন্টারে। তবে ঈদযাত্রায় ট্রেনের শিডিউল যেন বিপর্যয় না হয় সেদিকে নজর রয়েছে। তাছাড়া এবারও পূর্বাঞ্চলে ১০টি ষ্পেশাল ট্রেনও চলবে। টিকিট কালোবাজারী ঠেকাতে প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে আছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল