‘হামলার মুখে জীবন বাঁচাতে আমার ভাই দৌড়ে মসজিদে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। কিন্তু হামলাকারীরা চাইনিজ কুড়াল এনে মসজিদের দরজা কেটে তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে এবং কুপিয়ে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর হত্যাকারীরা আমার ভাইয়ের ডান পা কেটে কাঁধে নিয়ে বিজয় উল্লাস করতে করতে চলে যায়। আমার ভাইকে দাফন করতে হয়েছে এক পা ছাড়াই। এখন প্রতনিয়তই আমার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ হত্যা মামলার ৫ নম্বর আসামি ফেসবুক লাইভে এসে আমাদের হত্যার হুমকি দিয়েছে।’
বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন টেকনাফে খুন হওয়া লবণচাষি ও সমাজকর্মী নুরুল হক ভুট্টোর ভাই মো. নুরুল ইসলাম নুরু।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত ভুট্টোর ভাই নুরুল ইসলাম নুরু। উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরোয়ার কাবেরী, নিহতের মা আবেদা খাতুন, স্ত্রী নাজনীম সুলতানা, বড় ভাইয়ে স্ত্রী লাইলা বেগম, ছোট ভাই নুরুল আবসার খোকন, ভাগ্নে বেলাল ও নূরুল আবছার। এ সময় তিনি হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, ‘গত ১৫ মে সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর হোসেনের বাড়িতে একটি সালিশি বৈঠকে যোগ দিয়ে ফেরার পথে বড় ভাই নুরুল হক ভুট্টোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার নির্বাচনের বিরোধকে কেন্দ্র করে একরামের নেতৃত্বে আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।’
তিনি বলেন, ‘এলাকায় আমার ভাইয়ের পরিচ্ছন্ন ইমেজ ছিল। আমার ভাইয়ের কারণে নির্বাচনে চাচাতো ভাই বিপুল ভোটে জয়ী হয়। মূলত সেই থেকেই নুরুল হক ভুট্টোর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল একরাম ও তার বাহিনী।’
নুরু বলেন, ‘এই নৃশংস ঘটনার পরদিন ১৭ জনকে এজাহারভুক্ত এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনকে আসামি করে টেকনাফ থানায় মামলা করা হয়। পুলিশ এখন পর্যন্ত মাত্র ৭ আসামিকে গ্রেফতার করতে পেরেছে। এই ঘটনার আড়াই মাস পার হয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা একরামসহ বেশিরভাগ আসামি স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘মূলত একরামের বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার অপরাধে আমার ভাই ও আমার পরিবারকে চড়া মাসুল দিতে হয়েছে। একরাম ও তার অনুগত সন্ত্রাসীদের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার আমরা। এই অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় ও তাদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা ও ভাইকে হত্যার বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।’
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ