পাহাড়ি হলুদ কাছিম। এ সব পশুপাখির মধ্যে এখন ৮০-৯০ শতাংশ বিলুপ্ত। হলুদ কাছিম এখন ‘অতিবিপন্ন’ এর তালিকায়। এটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। এমন অস্তিত্ব সংকটের হলুদ কাছিমের বাচ্চা জন্ম নিয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশে। গত বৃহস্পতিবার ৩টি এবং গত শনিবার ১টি হলুদ কাছিমের বাচ্চা জন্ম নেয়। তিন বছর পর এগুলো প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হবে।
জানা যায়, বিভিন্ন পশুপাখির বংশবিস্তারের মাধ্যমে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। এরই ধারাবাহিকতায় চিড়িয়াখানায় ১০ বছর পর ৪টি হলুদ পাহাড়ি কাছিমের বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে তৈরি করা নতুন খাঁচায় কাছিম ছেড়ে দিয়ে ১৫ মাসের মধ্যে ডিম ফুটে এসব কাছিমের জন্ম হয়। এর আগে ২০১৯, ২০২০ ও ২০২২ সালে চিড়িয়াখানায় হাতে তৈরি ইনকিউবেটরের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া ৬৫টি অজগরের বাচ্চা তিনধাপে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয়েছিল। এছাড়া আবদ্ধ পরিবেশে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চিতা বিড়াল প্রজনন করেছিল।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন পশুপাখির বংশবিস্তারের মাধ্যমে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করার কাজ চলছে। এবার প্রজননের সফলতায় নতুন যোগ হয়েছে হলুদ পাহাড়ি কাছিম। হলুদ পাহাড়ি কাছিম একটি অতিবিপন্ন প্রাণি। যেসব পশুপাখি ৮০-৯০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ‘অতিবিপন্ন’ এর তালিকায় রাখা হয়েছে হলুদ কাছিমকে। তিনি বলেন, হলুদ পাহাড়ি কাছিম মাটির নিচে সচরাচর ৩-৫টি কিংবা ১-৭টি ডিম পাড়ে। ১২০-১৫০ দিন অথবা ১০০-১৯০ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা জন্ম নেয়। সেই হিসেবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া পাহাড়ি কাছিম প্রজননে একটু বেশি সময় নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ৩টি এবং গত শনিবার আরও ১টি হলুদ কাছিমের বাচ্চা জন্ম নেয়। আমরা আরও কাছিমের অপেক্ষায় আছি।
চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের পর চিড়িয়াখানায় বিপন্ন পাহাড়ি কাছিম প্রজনন করেনি। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা নির্বাহী কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে এই কাছিমের জন্য ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন খাঁচা তৈরি করা হয়। সেই খাঁচায় তাদেরকে প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণের সুযোগ দেওয়া হয়। এতে ৮টি কাছিম প্রজননের পরিবেশ ফিরে পায়। ভবিষ্যতে এই প্রজাতির কাছিমের আরও বংশবৃদ্ধি হবে এবং পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ ও বন বিভাগের সহযোগিতায় উপযুক্ত পরিবেশে রি-ওয়াইল্ডিং এর মাধ্যমে বন্য পরিবেশে তাদের অবমুক্ত করা হবে।
জানা যায়, হলুদ পাহাড়ি কাছিমকে চাকমা ভাষায় বলা হয় ‘পারবো ডুর’। এরা লম্বায় ৩৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। পরিপূর্ণ অবস্থায় ওজন দাঁড়ায় প্রায় ৩ কেজি। বর্ষায় এরা ডিম পাড়ে। হলুদ পাহাড়ি কাছিম উভচর প্রাণী হলেও সাধারণত ডাঙায় থাকে। গুল্মজাতীয় খাবার এদের প্রিয়। সবুজ ঘাস, লতাপাতা, ফুল ও ফল খায়। এই কাছিমের কোষগুলো পাতলা এবং পায়ের আঙ্গুলগুলোর মাঝে বুনট চামড়ার জাল থাকে, খোলস সমতল ও সুষম আকৃতির। ডাঙায় থাকে বলে মানুষ এদের শিকারের মাধ্যমে মাংস রান্না করে খায়। ফলে দিন দিন এদের সংখ্যা কমছে।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন