বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেছেন, ‘দলের নেতা নির্বাচনে ডিএনএ টেস্ট করতে হবে। ছাত্রদল থেকে আমরা নেতৃত্ব নেব। ডিএনএ টেষ্ট করে নেতা নেয়া হয়, আমি মীর নাসির জেলে গেলে আমাকে কনডেম সেলে রাখা হয়, আর অন্যরা গেলে তারা কোরমা পোলাও খায়। তারা কারা আর আমি কারা? ম্যাডাম সম্পর্কে শেখ হাসিনা যে বক্তব্যগুলো রেখেছে, সেগুলোর জবাব সে নিজেই পেয়ে গেছে। তাকে কারও তাড়াতে হয়নি, সে নিজেই পালিয়ে গেছে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে কাজীর দেউরী নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহম্মেদ সড়কে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মীর নাছির বলেন, ‘আমরা রাজনীতিতে নতুন প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করবো। লাল গেঞ্জি গায়ে দিয়ে, মাথায় হ্যাট পরে নেতা হওয়া যাবে না। নেতা হতে হলে অনেক কষ্ট করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মাদের কোনোভাবেই আমাদের ভেতরে আসতে দেওয়া যাবে না।’
জনগণের রায় বাস্তবায়নের জন্য একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করা দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা আপনাদের ক্ষমতায় থাকাকালীন অবস্থায় একটা অধ্যাদেশ আনবেন যে, আগামী নির্বাচনও কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হবে। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বললে আওয়ামী লীগের গা চুলকানি শুরু হয়। এই গা চুলকানি বন্ধ করার জন্য আমরা অন্তত দুইটি নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করতে চাই। যারা রাজনীতি প্রশাসন ভালো বোঝেন, তাদের সরকারে রাখুন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়, সেই বিধান রাখবেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন আরও বলেন, ‘ছাত্রদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তারা আন্দোলন করে, রক্ত দিয়ে জাতির ওপর থেকে যে বিশাল বোঝা, সেটা সরিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনাকে আজ পালিয়ে যেতে হয়েছে। শেখ হাসিনা যখন পালিয়ে যান, কত সুন্দর চেহারা তখন কত কালিমালিপ্ত! কারণ, তিনি মানুষকে মানুষ বলেননি, তার ওপরে কেউ নাই, সব নাকি তার কথায় চলবে। আল্লাহ বলে সবুর লও, তোমাকে সুযোগ দেব না, সেজন্য তাকে সেভাবে বিদায় নিতে হয়েছে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘ ছয় বছর পর একটি মঞ্চে উঠে মাইক ধরার সুযোগ পেয়েছি। যখন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে ইমিগ্রেশন পার হলাম তখনও আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি আদৌ কি বাংলাদেশে এসেছি নাকি অন্য কোথাও পৌঁছে গেছি। স্বল্প সময়ের মধ্যে এ স্বৈরাচারের পতন কীভাবে হলো আমার এটা বিশ্বাস হচ্ছে না। আমার ছোট ছোট সন্তানরা রাস্তায় নেমেছে, গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদের হাজারো সালাম জানাই। আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে তাদের কাছে। যারা ন্যায় বিচারে বিশ্বাস করে তারাই এভাবে গুলির সামনে এগিয়ে যেতে পারে। পিছপা হয় না।’
প্রধান বক্তার বক্তব্য মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। সে বিগত ১৫ বছরে গুম, খুন, হামলা মামলা দিয়ে নির্যাতন করেছে। তার হাত রক্তে রঞ্জিত। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। সে বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায় ভাবে বন্দী করে রেখেছিল। তারেক রহমানকে সাজা দিয়ে দেশে আসতে দেয় নাই। আমরা বলতে চায়, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করবো, রাষ্ট্র সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারন সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/শআ