সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সরবরাহকৃত খাবার পানি দীর্ঘদিন ধরে হরিলুট চলছিল। মূল সরবরাহ লাইনে অবৈধভাবে যে যার মতো করে মোটর বসিয়ে পানি তুলছিলেন। বৈধ সংযোগের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল অবৈধ সংযোগ। বৈধ গ্রাহকরাও পরিশোধ করছিলেন না পানির বিল। পানির বিল বাবদ সিটি করপোরেশন যেখানে প্রতি বছর ৪ কোটি টাকা পাওয়ার কথা সেখানে আদায় হচ্ছিল মাত্র ৮০ লাখ টাকা। এ অবস্থায় ‘হার্ড লাইন অ্যাকশনে’ নেমেছে সিসিক কর্তৃপক্ষ।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা প্রায় ৮ কোটি লিটার। এর মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে মাত্র ৩ কোটি লিটার। চাহিদার অর্ধেক পানিও সরবরাহ করতে পারছে না সিটি করপোরেশন। সরবরাহকৃত পানিও সঠিকভাবে ব্যবহার করছিলেন না নগরবাসী। অবৈধভাবে মোটর বসিয়ে পানি টেনে নেয়ায় খাবার পানির সংকট আরও প্রকট হয়ে দাঁড়ায়।
শুধু মোটর নয়, অনেকে সিটি করপোরেশনের অনুমতি না নিয়েই বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানির সংযোগ নিয়েছেন। এই অবৈধ গ্রাহকরা ভাগ বসাচ্ছেন বৈধ গ্রাহকের পানিতে। সিসিক’র হিসেব অনুযায়ী, নগরীতে পানির বৈধ সংযোগ রয়েছে ১৩ হাজার ২৫৫টি। বৈধ গ্রাহকের পাশাপাশি অবৈধ আরো প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক ব্যবহার করছেন সিটি করপোরেশনের সরবরাহকৃত পানি। হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর সিটি করপোরেশন পানি থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা বিল পাওয়ার কথা থাকলেও এই খাত থেকে আদায় হচ্ছে মাত্র ৮০ লাখ টাকা। এতে সিসিক’র পক্ষে পানি সরবরাহ চালু রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
এ অবস্থায় গত বুধবার থেকে অবৈধ সংযোগ ও বিল খেলাপিদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে সিসিক কর্তৃপক্ষ। প্রথম দিনই নগরীর শিবগঞ্জ, লামাপাড়া, সোনারপাড়া, মৌচাক, সাদীপুর, শাহীঈদগাহ, গোপালটিলা এলাকার শতাধিক বাসা-বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ সংযোগ গ্রহণকারীদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও জরিমানা করা হয়। বিল খেলাপিদেরও বিল পরিশোধে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারও এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পানি শাখার প্রধান ও নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর জানান, সিটি করপোরেশন ভর্তুকি দিয়ে পানি সরবরাহ করছে। এর মধ্যে গ্রাহকরা নিয়মিত বিল পরিশোধ না করায় এবং অবৈধ সংযোগ বেড়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি সরবরাহ কার্যক্রম গতিশীল ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এ অভিযান শুরু হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/১২ নভেম্বর ২০১৫/শরীফ