দীর্ঘ সময় পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে এসেছেন কোন ছাত্রনেতা। সদ্য ঘোষিত ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির চার নম্বর সহ-সভাপতি হয়েছেন ডা. মো. তোফাজ্জেল হক চয়ন। তিনি এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রলীগের গত কমিটিতে ছিলেন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক উপ-সম্পাদক।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ আলাদা ইউনিট ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের অধীনেই পরিচালিত হত। মোস্তফা জালালের পর বেশ কয়েকটি কমিটিতে স্বাস্থ্য সম্পাদকের উপরে কোন পদে আসীন হতে পারেননি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা। ডা. চয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসায় ঢাকা মেডিকেল ছাত্রলীগের মাঝে আনন্দের হিল্লোল বইছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডা. চয়নের পিতা সোনালী ব্যাংক কর্মকতা মো. মোজাম্মেল হক মাগুরা জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি। বৃহত্তর যশোর জেলা ছাত্রলীগের নেতাও ছিলেন এক সময়। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে মাগুরা-২ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর কারণে বিএনপি ও জামায়াত জোট তাকে এলাকাছাড়া করে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তিনি বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত। আর চয়নের মা রওশন আরা হক একজন গৃহীনী।
চয়ন জানান, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার আগেই পারিবারিকভাবেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। ২০০৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে যখন ভর্তি হন, তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছিল শিবির ও ছাত্রদলের দখলে। চয়ন বলেন, ছাত্রদল ও ছাত্র-শিবিরের চোখ রাঙ্গানিকে উপেক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী ছাত্র বন্ধুদের সুসংগঠিত করে ছাত্রলীগের পতাকা তলে নিয়ে এসে একসঙ্গে কাজ করি। ২০০৭ সালে ১/১১ পরবর্তী জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। একদিকে কলেজ প্রশাসন থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের বিএনপি-জামায়াতের দোসরদের চোখ রাঙানি, বিভিন্ন ধরনের হুমকি, অন্যদিকে প্রচণ্ড মানসিক নির্যাতন। তারপরও সকল বাঁধা বিপত্তি মোকাবিলা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে দীর্ঘদিন পরে প্রাণের সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করি। তখন থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি রাজনীতিই আমার একমাত্র নেশা। আজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একটি আদর্শ ইউনিট।
ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির স্বাস্থ্য সম্পাদক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হুমায়ূন ইসলাম সুমন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ডা. চয়নের অবদান তুলে ধরে বলেন, তাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসীন করায় আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ পরিবার আনন্দিত। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞ।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রত্যেককে তাদের ত্যাগ-তিতীক্ষা ও দক্ষতা দেখেই পদে আসীন করা হয়েছে। ডা. তোফাজ্জেল হক চয়নের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সে দায়িত্বের প্রতি অনেক নিষ্ঠাবান। ছাত্রলীগের দুঃসময়েও রাজপথে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। পারিবারিকভাবেও তারা বিএনপি-জামায়াতের হাতে অনেক নির্যাতিত হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ এস আহমেদ