নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা হতে দুপুর ২টা পর্যন্ত জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে ওই ১১জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। শুনানী শেষে আগামী ১৬ মে পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য্য করেছেন।
এর আগে সকালে সাত খুনের দুটি মামলায় গ্রেপ্তারকৃত নূর হোসেন, র্যাবের চাকুরীচ্যুত তিনজন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, এম এম রানা ও আরিফ হোসেন সহ ২৩ জনকে উপস্থিত করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সোমবার ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তারা হলো সাত খুনের ঘটনায় আইনজীবী চন্দন সরকারের স্ত্রী অর্চনা সরকার, তার ভাগ্নে মাধব কুমার দেব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিম-উল আহসান, কনস্টেবল আবদুল লতিফ, নিহত তাজুলের বাবা আবুল খায়ের, নিহত সিরাজুল ইসলাম লিটনের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম, ডা. জলিল আহমেদ, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আসাদুজ্জামান, ডা. শেখ ফরহাদ, ডা. মাঈনউদ্দিন ও লাশের সুরতহাল তৈরি করা আকতার হোসেন।
এদিকে সাত খুনের সাক্ষ্য গ্রহণের সময়ে কনস্টেবল আবদুল লতিফ মাথা ঘুরিয়ে কাঠগড়ায় পড়ে যান। ওই সময়ে আইনজীবীরা সাক্ষী আবদুল লতিফকে জিজ্ঞেস করেন আপনি কী ‘তারেক সাঈকে চিনেন। চিনলে কিভাবে চিনেন’। তখন আবদুল লতিফ ২৩ আসামীর মধ্যে তারেক সাঈদকে ইঙ্গিত করে বলেন ‘ওনি তারেক সাঈদ’। এ কথা বলেই তিনি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যান। পরে অন্যরা তাকে উঠিয়ে মাথায় পানি দেওয়ার পর সুস্থ্য হন। পরে তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বেরিয়ে আবদুল লতিফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত রাতে আমি না ঘুমানোর কারণে মাথাব্যাথা ছিল। ফলে অসুস্থ্য বোধ করি।’
প্রসঙ্গত ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সাত জন নিখোঁজের পর ওইদিন দিনগত রাত ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জ-শিমরাইল সড়কের নারায়ণগঞ্জ শহরের কিল্লারপুল এলাকাতে চেকপোস্ট বসানো হয়। তখন তারেক সাঈদের বহনকরা গাড়িকে থামিয়েছিল পুলিশ। ওই সময়ে ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করেছিল আবদুল লতিফ।
জানা গেছে, সাত খুনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী বিজয় কুমার পাল হলেন নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের মেয়ে জামাতা ও অপর বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি হলেন নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী।
দুটি মামলাতেই অভিন্ন সাক্ষী হলো ১২৭জন করে। এ কারণে উভয় মামলার সাক্ষীদের একই সঙ্গে দুই মামলায় জেরা করা হয়।
প্রসঙ্গত ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্ত শেষে প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র দেয় পুলিশ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাত খুনের দুটি মামলায় নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। আর চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখনো ১২ জন পলাতক রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৯ মে ১৬/ সালাহ উদ্দীন