বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম জার্মানি। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান, তাদের অনেকেরই পছন্দের দেশ জার্মানি। পড়ালেখা শেষে গবেষণা ও পূর্ণকালীন কাজ করার সুযোগ, জীবনযাত্রার উচ্চমানই মূলত আকৃষ্ট করে তাদের।
দেশটির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো টিউশন ফি নেই। শিক্ষার্থীদের শুধু একটি ‘সেমিস্টার ফি’ দিতে হয়। যা সাধারণত ১০০-৩০০ ইউরোর মধ্যে। ব্যতিক্রম শুধু ব্যাডেন-ভুর্টেমবার্গ রাজ্যে, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরোপীয় অর্থনৈতিক এলাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য সেমিস্টার ফি ১ হাজার ৫০০ ইউরো।
জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ইউনি-অ্যাসিস্ট। এই ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন ফি নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কো-অর্ডিনেটরকে ই-মেইল করলে তারা জানিয়ে দেয়। তবে ইউনি-অ্যাসিস্ট হচ্ছে সবচেয়ে ভালো মাধ্যম।
এর সঙ্গে ডাড স্কলারশিপের মধ্যে দেওয়া থাকে কীভাবে আবেদন করতে হয়। অনেক সময় ই-মেইলে ভর্তি হওয়া যায়। ডাড স্কলারশিপে বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করে ভর্তি হওয়া যায়। জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে ডাড আর ইউনি-অ্যাসিস্ট সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম।
এখানে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় নির্বাচনই ভবিষ্যতে একটি স্থিতিশীল এবং আকর্ষণীয় পেশাগত জীবনের ভিত্তি গড়ে দেয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জার্মানিতে পড়াশোনা শেষে চাকরি এবং সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি তালিকা দেখে নেওয়া যাক-
প্রকৌশলবিদ্যা (ইঞ্জিনিয়ারিং)
প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের দেশ জার্মানি প্রকৌশল শিক্ষায় বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। এ বিষয়ে পড়ে বোশ, সিমেন্স, বিএমডব্লিউ, ভক্সওয়াগনের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ এখানে বেশ উজ্জ্বল। এ বিষয়ের বিশেষায়িত শাখা হলো মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং ও এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং।
এতে শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো, টিইউ মিউনিখ, আরডব্লিউটিএইচ আখেন ইউনিভার্সিটি, কার্লসরুহে ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। এখানে গড় বেতন পরিবেশ প্রকৌশলী ৪৪ হাজার এবং অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ার ৫৭ হাজার ইউরো।
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি
ডিজিটাল রূপান্তর, সফটওয়্যার উন্নয়ন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসারে এ খাতে বিশেষজ্ঞদের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। জার্মানিতে এই খাতের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো, টিইউ মিউনিখ, টিইউ বার্লিন,আরডব্লিউটিএইচ আখেন বিশ্ববিদ্যালয়, কার্লসরুহে ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখ। এখানে গড় বেতন ৫৫ হাজার ইউরো।
ব্যবসায় প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা
যারা ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে পড়তে আগ্রহী, তাদের জন্য জার্মানির ব্যবসায় প্রশাসন প্রোগ্রামগুলো আন্তর্জাতিক মানের। বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ, ইন্টার্নশিপ এবং প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে মানহাইম বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্রাংকফুর্ট স্কুল অব ফাইন্যান্স অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে গড় বেতন অভিজ্ঞতা অনুুযায়ী ৫৫ হাজার ইউরো।
স্থাপত্যবিদ্যা
নতুন অবকাঠামো, আধুনিক স্থাপত্য আর ঐতিহ্যকে নতুন রূপে সাজানোর কাজে আর্কিটেকচারের চাহিদা বরাবরই বেশি। সৃজনশীল এবং চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি দারুণ ক্ষেত্র। স্থাপত্যবিদ্যার জন্য ভাইমার বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রান্ডেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং উপারটাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের প্রতিষ্ঠান হতে পারে। এখানে মাসিক বেতন পড়বে ৩৯ হাজার ইউরো।
চিকিৎসাশাস্ত্র, স্বাস্থ্যসেবা ও মনোবিজ্ঞান
জার্মানিতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। এতে দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থা অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়েছে। তবে দেশটিতে এই খাতে সাফল্য পেতে জার্মান ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তবে যারা এ ভাষায় দক্ষ, তাদের জন্য সেবা ও সম্মান দুটোই নিশ্চিত।
হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, চ্যারিটি-ইউনিভার্সিট্যাটসমেডিজিন বার্লিন, লিউবেক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মনোবিজ্ঞানের জন্য এলএমইউ মিউনিখ, হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বার্লিন মানহাইম বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হতে পারে।
অভিজ্ঞতা এবং কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা ও করপোরেট সেক্টরে মাসিক বেতন তুলনামূলক বেশি।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির সমৃদ্ধ দেশ জার্মানির প্রায় ৪০০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বিশ্বমানের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি এবং সুযোগ-সুবিধা যে কাউকে আকৃষ্ট করবে।
এর মধ্যে পছন্দ, সঠিক বিষয় নির্বাচন এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দ্বার খুলে দিতে পারে।
তথ্যসূত্র: German Academic Exchange Service
বিডি প্রতিদিন/কামাল