বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে বিপুল সংখ্যক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের চাহিদা অনেক অংশে কমিয়েছে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং। এটি এমন একটি পেশা যেখানে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো ধরাবাঁধা সময় নেই। আপনার যখন ইচ্ছা, যেখানে ইচ্ছা কাজ করতে পারেন।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম আপওয়ার্ক জানিয়েছে, বর্তমানে দক্ষ জ্ঞানভিত্তিক কর্মীদের প্রায় ২৮ শতাংশই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। আর ৩৬ শতাংশ পূর্ণকালীন চাকরিজীবী শিগগিরই এই পেশায় যুক্ত হয়ে কথা চিন্তা করছেন।
এই চিন্তার পেছনে বিশ্লেষকরা অনেক কারণ খুঁজে বের করেছেন। ফ্রিল্যান্সিং কাজের স্বাধীনতা দেওয়ার পাশাপাশি, সময় বেছে নেওয়া এবং ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ করে দেয়। আপনি আসলে একপ্রকার ছোট ব্যবসার মালিক হয়ে যান। যার মাধ্যমে নিজের দক্ষতা অনুযায়ী কাজের দিক নির্ধারণ করতে পারেন। তবে এই পেশার স্বাধীনতার সুযোগ এবং বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ফ্রিল্যান্সিং মূলত এমন একটি পেশা যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এটি সাধারণ চাকরির মতোই। কিন্তু ভিন্নতা হলো এখানে আপনি আপনার স্বাধীন মতো কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রথমে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। আপনি কি বর্তমান চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি ফ্রিল্যান্সিংয়ে যেতে চান। নাকি আয়ের একটি অতিরিক্ত উৎস হিসেবে এটি শুরু করবেন? এই সিদ্ধান্তের পর আপনার ব্যবসার ধরন, ক্লায়েন্ট নির্বাচন, সেবার মূল্য এবং আয়কাঠামো। আংশিকভাবে শুরু করলে সময় ব্যবস্থাপনা ও কাজের ভারসাম্য রক্ষা করা গুরুক্বপূর্ণ। আর যদি পুরোদমে নামতে চান, তবে একটি স্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। দক্ষতার চাহিদা যাচাই করুন।
কি ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন
অনেকেরই কনফিউশন থাকে যে আসলেই কি আমি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবো? কি কি জিনিস দরকার এই কাজের জন্য? আসলে সত্যি কথা বলতে তেমন কিছুই লাগবে না আপনাকে এই পেশা শুরু করার জন্য।প্রথমে ইচ্ছাশক্তি এবং ধৈর্য্য রাখতে হবে। এগুলো থাকলেই আপনি এই সেক্টরে নিমিষেই সফল হবেন। এর পাশাপাশি আপনার দরকার হবে ক্লায়েটের সাথে যোগাযোগের দক্ষতা এবং কাজ চালানোর মতো ইংরেজি জানা। ইন্টারনেট সম্পর্কিত ভালো ধারণা ও গুগল এবং ইউটিউব থেকে বিভিন্ন রিসোর্স খুঁজে বের করার দক্ষতা এক্ষেত্রে আপনাকে অনেক সহায়তা করবে।
আপনি যদি লেখালেখি, ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, মার্কেটিং বা অনুবাদের মতো কোনো দক্ষতা রাখেন, তবে আপওয়ার্ক, ফাইভার, লিংকডইন বা অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম ঘেঁটে দেখুন, এসব সেবার জন্য ক্লায়েন্টরা কী পরিমাণে কাজ দিচ্ছে। বাজার বিশ্লেষণের মাধ্যমে বুঝে নিন কোন খাতগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কোন ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কম। মনে রাখবেন, সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে এমন সেবা দিতে, যা সরাসরি ক্লায়েটের যে কোন সমস্যা সমাধান করতে পারে।
কীভাবে শুরু করবো
আগ্রহের কমতি নেই কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন। এই পেশায় আসার জন্য আপনাকে প্রথমেই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার যে কাজে আগ্রহ সব থেকে বেশি, তা বেছে নিতে হবে। এর ফলে আপনি কাজ করে যেমন মজা পাবেন, তেমন অনেক দূর যেতে পারবেন। যেমন ধরুন গ্রাফিক্স ডিজাইন সেকশনটা বেছে নিলেন ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য। এই কাজটি সৃজনশীল মানুষদের কাজ। সবার দ্বারা ডিজাইন করা সম্ভব নয়। এটি বেছে নেওয়ার আগে এই কাজটি আপনি কেমন পারছেন, আগ্রহ নির্ধারণ করতে হবে। যদি দেখেন সব কিছু ঠিকঠাক, সেক্ষেত্রে এটিকে নির্ধারিত করে এই সম্পৃক্ত যত কাজ আছে সব শিখবেন। যেমন: ব্যানার, কভার পেজ, লিফলেট, পোস্টার, লোগো ইত্যাদি ডিজাইন করা।
এগুলো আপনি নিজে নিজেই গুগলে বা ইউটিউবে রিসোর্স খুঁজে সেখান থেকে দেখে দেখে শিখতে পারেন। আবার চাইলে বিভিন্ন কোর্স আছে অনলাইনে সেগুলোও করতে পারেন। পুরোটাই আপনার ইচ্ছার উপরে নির্ভরশীল। কাজ শেখার পর আপনাকি একটি ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এর অ্যাকাউন্টকে সুন্দর সাজাতে হবে।
ব্যবসার মৌলিক ধারণা জেনে নিন
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি কেবল কর্মী, একজন উদ্যোক্তা। তাই আপনাকে ব্যবসার মৌলিক বিষয়গুলো বুঝতে হবে। আপনার সেবার মূল্য কীভাবে নির্ধারণ করবেন, ক্লায়েন্টের সঙ্গে কীভাবে চুক্তি করবেন, কর বা ট্যাক্স কীভাবে পরিচালনা করবেন, এসব জানা প্রয়োজন। কাজের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক ব্যবস্থাপনা, সময় পরিকল্পনা এবং পেশাদার আচরণে পারদর্শী হতে হবে।
তাই স্বাধীন ও কর্মসংস্থানের উৎস হিসেবে তরুণরাফ্রিল্যান্সিং এর জগতে আসতে পারেন।
বিডি প্রতিদিন/কামাল