জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলে হেরোইন সেবনের দায়ে দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিস্কার করে পুলিশে সোর্পদ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহিস্কৃত দুই শিক্ষার্থী হলেন, বাংলা বিভাগের ৩৯ তম ব্যাচের আল বেরুনী হলের মাইনুদ্দিন জনি এবং কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪২ তম ব্যাচের শহীদ রফিক-জব্বার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো.সাজ্জাদ হোসেন সায়েম।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের ৩৩৫ নং কক্ষ থেকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে হেরোইন সেবনকালে তাদেরকে হাতেনাতে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সোর্পদ করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে রাত ৮টায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় জরুরী সিন্ডিকেট সভা।
জরুরী সিন্ডিকেটে ডিসিপ্লিনারি কমিটির সুপারিশক্রমে তাদেরকে সাময়িক বহিস্কার ও পুলিশে সোর্পদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সাথে ছাত্রকল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক রাশেদা আখতারকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক।
বহিস্কৃত সায়েম বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের জাবি ছাত্র সংসদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তবে এর আগে তিনি মাদক সেবন করার দায়ে সংগঠন থেকেও বহিস্কৃত হন। বহিস্কৃত এ নেতার সম্পর্কে সংগঠনের জাবি শাখা সভাপতি দীপাঞ্জন সিদ্ধান্ত কাজল বলেন, “তাকে আমরা এ অপরাধে তিন-চার মাস আগেই সংগঠন থেকে বহিস্কার করেছিলাম। আমাদের হাতে তখন কোন প্রমাণ ছিল না কিন্তু বিষয়গুলো তো জানা যায়। আমাদের সংগঠন কোন বিয়োগান্তক জীবনাচরণকে সমর্থন করে না। এই ধরণের লোক আমরা সংগঠনে রাখব না।”
এর আগে গত জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সায়েমকে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবনের দায়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল এবং এ অভিযোগের তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সহকারী প্রক্টর প্রভাষক মাহবুবুল মোর্শেদ।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আটককৃত দুই শিক্ষার্থী প্রক্টরিয়াল বডির জিজ্ঞাসাবাদে মাদক সরবরাহকারী এবং তাদের সঙ্গে মাদক গ্রহণকারী চক্রের বেশ কয়েক জনের নাম বলেছেন। এমনকি এ চক্রের সঙ্গে কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীও যুক্ত রয়েছেন বলেও তারা জানিয়েছেন।
জানা যায়, গোপন সূত্রে এই দুই শিক্ষার্থী হিরোইন সেবন করছেন জানতে পেরে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ, সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন, উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল রানা, হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হাসান নোলক, শাকিল মাহমুদ শাওন, মাসুদ ইউনুস সিফাত, নুরুদ্দিন মাহমুদ ছানাউল, সিদ্দিকুর রহমান প্রত্যয় ক্যাম্পাসে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিককে সাথে নিয়ে তাদেরকে হাতে নাতে আটক করে হল প্রশাসনের কাছে দেন। পরে হল প্রশাসন তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করলে বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদেরকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
বিডি প্রতিদিন/১২ আগস্ট ২০১৬/হিমেল-০৭