আশুলিয়ায় নরসিংহপুর এলাকার ডেকো ডিজাইন লিমিটেড কারখানার পানি পান করে অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে শ্রমিকদের সাথে কথা বললে তারা সবাই ভূত আতঙ্কে অসুস্থের কথা বলেন। এর পর থেকে গত দু'দিনে কর্তৃপক্ষ ভূত তাড়াতে কারখানার ভেতরে ঘটিয়েছে নানা কাণ্ড। এমনকি মঙ্গলবার সকাল থেকে ওই কারখানার ভেতরে আয়োজন করা হয়েছে বিশাল দোয়া মাহফিল। স্থানীয় ২৭টি মসজিদের ইমামরা ভূত তাড়ানোর কাজে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন ফকির দিয়ে কারখানার সীমানা প্রাচিরের চারপাশে সরিষা ও সোনা রুপার পানি ছেটানো হয়।
কারখানার শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার ডেকো ডিজাইন লিমিটেড কারখানায় প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। গত বৃহস্পতিবার (২৫ আগষ্ট) কারখানার ভেতরের টয়লেট থেকে বের হয়ে পানি পান করার পরই কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর পরে শনিবার দুপুরে খাবার খাওয়ার পর কারখানার ভেতরে পানি পান ও টয়লেট থেকে বেরিয়ে আবারো ওই কারখানার অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর থেকেই ওই কারখানার শ্রমিকদের ভেতরে ভূত আতঙ্ক দেখা দেয়।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, ভূত তাড়ানোর জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কবিরাজ ও ফকির নিয়ে আসা হয়েছে। ওই কারখানার সীমানা প্রাচিরের চারপাশে সরিষা ও সোনা-রুপার পানি ছেটানো হয়েছে। পরে দুপুরের দিকে 'ভূত তাড়িয়ে' কারখানার মূল ফটকসহ প্রতিটি গেটের সামনে ঝুলানো হয় প্রায় ২০টি তাবিজ। এর পর কারখানার ভেতরে আয়োজন করা হয় দোয়া মাহফিলের। এতে ওই এলাকার বিভিন্ন মসজিদের প্রায় ২৭জন ইমাম অংশগ্রহণ করেন।
স্থানীয় মসজিদের হাফেজ নুরুল আমিন বলেন, জিন, ভূত, পেত্নির কারনে এ কারখানার শ্রমিকরা গত তিন দিন যাবৎ কাজে যোগ দিতে পারছে না। আর এ কারনেই আজকে ভূত তাড়ানোর কাজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মিরপুর থেকে আসা নুরুল আহসান ভুঁইয়া নামের এক ফকির বলেন, কারখানায় একাধিক জীন ও ভূত রয়েছে। আর এজন্য কারখানার ভূত তাড়াতে সরিষা, সোনা-রুপার পানি ছিটাঁনো হয়। এছাড়াও ওই কারখানার বিভিন্ন গেটের সামনে তাবিজ ঝুলানো হয়েছে। যাতে করে ভূত দ্রুত পালিয়ে যায়।
নাসিমা, ফাহিমা আক্তার ও শাহিদা বেগম বলেন, গত এক সপ্তাহ যাবৎ কারখানার ভেতরে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আর এ জন্যই কারখানার চারপাশে ঝুলানো হয়েছে একাধিক তাবিজ।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ কমিটি ইতোমধ্যে কারখানার পানি সংগ্রহ করে মহাখালি কলেরা হাসপাতালের রোগত্বত্ত বিভাগে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আমজাদুল হক বলেন, ভূত বলে কিছু নেই। এ ব্যাপারে আশুলিয়ার শিল্প পুলিশের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এছাড়াও যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থতি এড়াতে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ